সুদানে বাংলাদেশ দূতের বাসভবন-দূতাবাসে গোলাগুলি

রাষ্ট্রক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে সুদানে চলমান যুদ্ধে বিবাদমান দুই সশস্ত্র বাহিনীর গোলাগুলি খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাসে আঘাত হেনেছে। গত ১৫ এপ্রিল সুদানে সংঘাতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ এপ্রিল তার দূতাবাসও গুলির আঘাতের শিকার হয়েছে।

দুই প্রতিপক্ষের গোলাগুলির সময় দূতাবাসের ভবনের জানালা ও দেয়াল ভেদ করে মেশিনগানের গুলি ঢুকে পড়তে দেখা গেছে। তবে এতে দূতাবাসের কেউ হতাহত হননি। এর আগে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবনও গুলিতে আক্রান্ত হয়।

খার্তুমে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসাটি ছিল যুদ্ধের একেবারে কেন্দ্রে বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে গুলির তথ্য জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। সংঘর্ষের ফলে খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যে মেশিনগানের গুলি ঢুকে পড়েছে। সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসায়ও গুলি এসে পড়েছে।

জানা গেছে, খার্তুমের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জাজিরা প্রদেশের মাদানি শহরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, সুদানে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে খার্তুমেই প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রথম দফায় ৫০০ বাংলাদেশিকে এপ্রিলের শেষে জেদ্দায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। শুরুতে ১০টি বাসে ৫০০ বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদান নামে একটি শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে সেখান থেকে জাহাজ বা ফেরিতে করে জেদ্দায় যাবে তারা।

এদিকে সুদানে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খারতুমে বাংলাদেশ দূতাবাস এরই মধ্যে এ বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।

গত শনিবার (২২ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুদানের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে সফর থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশি নাগরিকদের পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল।

আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত চারশো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যাদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মীও রয়েছেন। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরমধ্যে টানা প্রায় ৪৮ ঘণ্টার আলোচনার পর সুদানে যুদ্ধবিরতিতে দুপক্ষের সমঝোতা হয়। তবে সোমবার মধ্যরাত থেকে ৭২ ঘণ্টার এ যুদ্ধবিরতি আদতে কার্যকর হয়নি।

দেশটিতে চিকিৎসাসেবা, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহতভাবে বিঘ্নিত হওয়া এবং খাদ্যের মজুত ফুরিয়ে আসায় মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিক ও কূটনীতিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *