হালদায় ডিম ছাড়লো মা মাছ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে বহু প্রতীক্ষিত ডিম ছেড়েছে মা মাছ। রোববার (১৮ জুন) দিবাগত মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া।

তিনি বলেন, এখন মৌসুমের সর্বশেষ অমাবস্যার জো চলছে। শেষমুহূর্তে এসে মা মাছ ডিম ছাড়লো। এর আগে কয়েকবার নমুনা ডিম ছেড়েছিল। এবার পুরোপুরি ডিম ছেড়েছে। রোববার রাতে নদীর নাপিতের ঘাট, আমতুয়া এবং আজিমের ঘাট এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন জেলেরা।

ডিম সংগ্রহকারী জেলে মো. কামাল বলেন, রোববার দিনেও মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছিল। রাতে এসে পুরোপুরি ডিম ছাড়লো। আমরা ৫টি নৌকা দিয়ে গড়দুয়ারা নয়াহাট কুমে থেকে ডিম সংগ্রহ করছি।

জানা গেছে, বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এই সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয়, তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদা গবেষকরা বলছেন, এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে ইতোমধ্যে পাঁচটি জো চলে গেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। সর্বশেষ রোববার দিবাগত রাতে মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়ে।

গত এপ্রিল থেকে হালদা পাড়ের প্রায় ৫ শতাধিক জেলে ডিম সংগ্রহের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে জো চলাকালে তারা রাত-দিন নির্ঘুম থেকে ডিম ছাড়ার প্রহর গুনেছেন।

খাগড়াছড়ির জেলার বাটনাতলী পাহাড় হতে নেমে সর্পিল ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হালদা নদী মিলেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এই নদীর সুরক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে এটিকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করেছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *