পচা বাসি ভেজাল মুক্ত মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন-সুজন

নিরাপদ খাদ্য ব্যস্থাপনার লক্ষ্যে পচা বাসি ভেজাল মুক্ত মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সেলিম রেজার প্রতি আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি আজ বুধবার (১ জানুয়ারী) বিকেলে আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কস্থ বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের দপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

এ সময় সুজন বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশের সাধারন জনগনের মাঝে নিরাপদ খাদ্য দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে বিএসটিআইকে গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএসটিআইও সে লক্ষ্যে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তথাপি আমরা সাধারন জনগন উদ্বিগ্ন এবং শংকিত। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে ভেজালের জাল বিস্তৃত করে রেখেছে তার থেকে সাধারন জনগনকে মুক্তি দিতে বিএসটিআইয়ের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে। শুধুমাত্র মাঝে মাঝে কিছু কারখানা কিংবা দোকানপাটে অভিযান পরিচালনা করে জনগনকে ভেজালের হাত থেকে মুক্ত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সারা বছরব্যাপী পরিকল্পিত অভিযান। কারন আপনাদের মনে রাখতে হবে সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআই জনগনের নিকট দায়বদ্ধ। জনগনের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করার জন্য বিএসটিআই এর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর নিকট উদাত্ত আহবান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ইদানিং আমরা লক্ষ্য করছি ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারী এবং বিপণনকারীরা তাদের নিত্য নতুন অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন হরিপুর থেকে তেল এনে পরিশোধিত করে বিভিন্ন নামী দামী প্রতিষ্ঠান সেই তেল পেট্রোল পাম্পে ব্যবহার করছে। যার ফলে জনসাধারনের লাখ লাখ টাকার গাড়ীর যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে ইঞ্জিন সহ দামী যন্ত্রপাতি। তাছাড়া সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ থেকে ব্রোষ্টের তেল এনে সেই তেল পরিশোধিত করে ভোজ্য তেলের সাথে মিশ্রন করে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানীকৃত পচা বিবর্ণ খেজুর বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। সাধারন জনগন না বুঝে এসব পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছে। জনসন্মূখে এতোসব অপকর্ম চললেও বিএসটিআইয়ের কার্যত কোন দৃষ্টি নেই তাদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পাচ্ছি আসন্ন রমজানকে টার্গেট করে ভেজাল খাদ্য উৎপাদনকারীরা এখন থেকেই ভোজ্যতেল, সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, নুডুলস, ঘি সহ প্রয়োজনীয় ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। কারণ রমজানের সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকে তাই এ সময়টাকে টার্গেট করে তারা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আগে তারা বিভিন্ন হাট বাজারে তাদের ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন করে বিপণন করতো। কিন্তু এখন তারা সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর লোক চক্ষুর অন্তরালে অভিজাত এলাকার বাসা বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে তাদের ভেজাল খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চাকচিক্য মোড়কে ভোক্তাগণ প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছে। বিভিন্ন নামহীন ব্র্যান্ডধারী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত মিনারেল ওয়াটার নামক দূষিত পানি পান করে জনগন প্রায়শই দীর্ঘ মেয়াদী পীড়ায় পতিত হচ্ছে। এসব ভেজাল পণ্য সামগ্রী গ্রহণ করে বিভিন্ন পীড়ায় পতিত দেশের জনগনের আয়ের বিরাট একটি অংশ অসুখ বিসুখে ব্যয় হচ্ছে। তাই জনগনকে এসব ভেজাল খাদ্র দ্রব্য থেকে মুক্তি দিতে বিএসটিআইকে কার্যত একটি শক্তিশালী সেবাধর্মী প্রতিষ্টানে পরিনত করার উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান সুজন।

তিনি নিত্য নতুন প্রযুক্তি কিংবা অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারন জনগনের কাছাকাছি পৌছে ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনকারী এবং সরবরাহকারীর তথ্য সংগ্রহ করার আহবান জানান। এছাড়া ভেজাল খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয় প্রয়োজনে আইন করে জেলসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য পরিচালকের নিকট আহবান জানান।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সেলিম রেজা আন্তরিকতার সাথে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে তার সাথে মতবিনিময় করতে আসায় সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়া মারফত আমি নাগরিক উদ্যোগের জনহিতকর কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করার জন্য তিনি নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে কোন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগন। জনগন সচেতন থাকলে সেখানে কোন অনিয়ম দূর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তিনি আরো বলেন ইতিমধ্যে মহাপরিচালক মহোদয় সকল আঞ্চলিক কার্যালয়কে ভেজাল খাদ্র দ্রব্য উৎপাদন এবং বিপণন বিষয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনার সাথে নাগরিক উদ্যোগের উত্থাপিত বিষয়গুলো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। বিএসটিআইকে গতিশীল করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রস্তাবিত তিন তলার স্থলে ইতিমধ্যে দশ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। যার উন্নয়ন কাজও চলমান। এছাড়া পঞ্চাশ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতিও ক্রয় করা হয়েছে। নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে বিএসটিআই নব উদ্যোমে কাজ করার অঙ্গীকার করবে জানিয়ে তিনি বলেন তখন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য আর ঢাকায় যেতে হবে না। চট্টগ্রামেই সমগ্র পণ্যের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে।

তিনি বিএসটিআইকে জনগনের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন বলে নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই উপ-পরিচালক (মেট) মোঃ শওকত ওসমান, উপ-পরিচালক (সিএম) মোঃ নুরুল আমিন, রাজনীতিবিদ আব্দুর রহমান মিয়া, সাইদুর রহমান চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, নগর যুবলীগ সদস্য আব্দুল আজিম, অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, মোঃ শাহজাহান, মোঃ জাহাঙ্গীর, মোঃ নাছির, সফি আলম বাদশা, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, মোঃ ওয়াসিম, আজম আলী জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম প্রমূখ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *