বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নগরবাউলখ্যাত ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসের জন্মদিন আজ।
তবে দিনটি নিয়ে তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বিশেষ কোনো আয়োজনও নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। জাঁকজমক আয়োজনে মন টানে না তার। তাই নিজে সাদামাটাভাবে এ দিনটি কাটান।
কিন্তু ভক্তরা তার জন্মদিন উপলক্ষে নানা আয়োজন করেন। এসব দেখতে তার ভালো লাগে। তবে বেশি হৈহুল্লোড় ভালো লাগে না। তাই আজকের দিনটি জেমস আগের দিনের মতো করেই কাটাবেন।
এ প্রসঙ্গে এ সঙ্গীতশিল্পী বলেন, ‘অন্যসব দিনের মতোই আজকের দিনটি কাটবে। বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। ভক্তরা আয়োজন করবে। ওগুলো দেখতেই ভালো লাগে। তবে সবার কাছে দোয়া চাই। আগামীতে যাতে নতুন গান নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হতে পারি।’
এই রকস্টারের জন্ম ১৯৬৪ সালে নওগাঁর পত্নীতলায়। তবে কৈশোর, তারুণ্য কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে। বাবা সরকারি বড় কর্মকর্তা ছিলেন। যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেমস ছিলেন অনেকটা বোহেমিয়ান। চট্টগ্রামে আজিজ বোর্ডিংয়ের একটি রুমে থেকে সঙ্গীত চর্চা ও সন্ধ্যার পর নাইট ক্লাবে গান করতেন। এভাবেই জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে তার। পরে ঢাকা চলে আসেন।
জেমস ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। ১৯৮৭ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘ষ্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের একক অ্যালবাম প্রকাশ করে সুপারহিট হয়ে যান জেমস।
এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ পায়।
এরপর ‘ফিলিংস’ ভেঙে জেমস গড়ে তোলেন নতুন লাইনআপে ব্যান্ড ‘নগর বাউল’। এই ব্যান্ড ‘দুষ্টু ছেলের দল’ এবং ‘বিজলি’ অ্যালবাম দুটির মধ্যেই আটকে যায়।
জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯), দুষ্টু ছেলের দল (২০০১) প্রভৃতি।
জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)।
২০০৪ সালে কলকাতার সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল।
২০০৬ সালে আবারো বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুইটি হল রিশতে এবং আলবিদা। আর তাতেই বাজিমাত।
জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গান এরমধ্যে, বাংলাদেশ, জেল থেকে আমি বলছি, মা, দুখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা কতো দিন, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া উল্লেখযোগ্য।
২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে ‘ভিগি ভিগি’ নামে একটি গান করে সেখানেও বেশ আলোচিত হন। পরে বলিউডের আরও কয়েকটি ছবিতে গান করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সেরা গায়ক হিসেবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার’ গ্রহণ করেন জেমস।
গানের মত তারায় তারায় রটিয়ে যাক জেমসের জীবনের সফলতা। সেই সাথে এ প্রজন্মের গুরুর হাত ধরে বাংলা ব্যান্ড গান রটিয়ে যাক বিশ্বজুড়ে। সেই শুভ কামনায় ২৪ ঘন্টা নিউজের পক্ষ থেকে শুভ জন্মদিন গুরু, শুভ জন্মদিন জেমস।
Leave a Reply