ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।

ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন-কথা নেই, বার্তা নেই; হঠাৎ ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে…আমরা, আওয়ামী লীগ; আমরাইতো এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য।’

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, সেজন্য যতরকম সংস্কার দরকার, সেটা আওয়ামী লীগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা…। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দিবো- এই স্লোগানও আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় স্বৈরশাসকরা দেশ শাসন করেছে। তাদের সময় সাধারণ মানুষের ভোট দিতে হয়নি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে ফল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম করে আজ আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। কিন্তু সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে এভাবে স্যাংশন দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা, সেটা র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক বা অন্য যেকোনো সংস্থা হোক; তারা অন্যায় করলে আমাদের দেশে সেটার বিচার হয়।এই বিচারে কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় তারা কোনো কাজ অতিরিক্ত করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এমন ব্যবস্থা আছে; সেখানে এই স্যাংশনে কী কারণে?’

২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন; প্রত্যেকটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সবসময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’

উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। সে কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেনি। ওই বছরের ৩০ মার্চ তাকে জনগণের রুদ্র রোষে পড়ে পদত্যাগ বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে সে যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলো… এরপর জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেলো। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কাজেই একটা নির্বাচন অবস্থা, সুষ্ঠু হবে- এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। এবং আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। তো আজ তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও দেবে; দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *