সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে বৃহৎ পরিসরে মাচা তৈরি করে শুকানো হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত নানা জাতের মাছ।রায়পুর জুড়ে একাজে নিয়োজিত রয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
জানা যায়, নভেম্বর থেকে মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত শুটকি উৎপাদনের উপযুক্ত মৌসুম। এ সময় নদী ও সমুদ্র থেকে জেলেরা টনকে টন বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরন করে রোদের তাপে সেগুলো শুটকিতে পরিনত করেন। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলেরা শুটকি ব্যবসার জন্য এই এলাকায় আসেন।শুটকির জন্য প্রসিদ্ধ মাছ হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, পোয়া, রুপচাঁদা, লাক্ষা, চিংড়িসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ। এ অঞ্চলের শুটকী চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মণ শুটকি গুদামজাত করে বর্ষা মৌসুমেও উচ্চদামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হন। শুটকি প্রস্তুত করতে কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেয়া হয়না বলে এখানকার শুটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব শুটকি এখন রফতানি হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
উঠান মাঝির ঘাটের শুটকি চাষী মোহাম্মদ আব্দুন্নবী বলেন, ‘আমি আজ থেকে তিন মাস আগে মাচা তৈরিসহ শুটকির কাজ শুরু করেছি। এ ব্যস্ততা আরো ৫ থেকে ৬ মাস থাকবে।গত বছরের তুলনায় কিল্লার পরিমান ও পরিধি বহুগুণ বাড়িয়েছি। দিনব্যাপী পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও ব্যস্ত সময় দিচ্ছে। আমার কিল্লায় ৩০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে। কাজ ও ক্যাটাগরি ভিত্তিক শ্রমিকের দৈনিক বেতন ৫শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। এবার সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। শুটকি পল্লীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাই শুটকীর বাজারমুল্যও কম।শুটকি উৎপাদনকারী অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, তারা নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজির অভাব, সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শুটকির ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব। অন্যদিকে শুটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোন সরকারী নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষন ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক এবং মানসম্মত পদ্ধতি কোন উৎপাদকেরা গ্রহন করছেননা। শুটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠি মনে করেন যে, এ মৌসূম তাদের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ।আড়ৎদাররা জানান, নদি, সাগর থেকে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে শুটকী পল্লীতে নিয়ে এসে নারী শ্রমিকরা তা পরিস্কার করেন। এরপর পরিস্কার পানিতে মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকাতে দেয়া হয়। তিন চার দিনের রোদে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি শুটকি পল্লী থেকে সপ্তাহে কয়েকশত মণ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়।এই বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার উপকূলে শুটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত বছর ৫০ টন মতো শুঁটকি উৎপাদন করা হলেও এবার উৎপাদন বেড়ে ৭০ টন মতো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ও সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশালে শুঁটকির প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
Leave a Reply