প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে: অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক

আন্তর্জাতিক আভিবাসী দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা কর্মসংস্থান অফিসের উদ্যোগে আজ ১৮ ডিসেম্বর সোমবার সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালি পরবর্তী সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে ‘অভিবাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্রবাসী কর্মীরা উন্নয়নের অংশীদার, সমুন্নত রাখবো তাদের অধিকার’।

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) তানভীর আল-নাসীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পৃলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মনীশ দাশ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পান্না আকতার ও মহিলা টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আশরিফা তানজিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিকেটিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ নুরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান ফেরদৌস খায়ের, আইওএম’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা শাহানাজ, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ওসি (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, বায়রা চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবু জাফর, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম’র চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার উৎপল বড়ুয়া, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ, প্রত্যাশী’র প্রকল্প সমন্বয়ক বসির আহম্মেদ মনি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের এনজিও সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শিকদার প্রমূখ। এনজিও, ব্যাংক, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, অভিবাসী ও এয়ারলাইন্স, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা র‌্যালি ও আলোচনা সভায় অংশ নেন।

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, এ অফিসে চলতি সালের জানুয়ারি থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৭ হাজার ৭৯৫জন কর্মী বিদেশ গমনের জন্য নিবন্ধিত হন। এ সময়ে ৬৪ হাজার ১৭১ জন কর্মী চট্টগ্রাম জেলা থেকে বিদেশ গমন করেন এবং ৪৫ হাজার ৭৯৫ জন কর্মীর বিপরীতে চট্টগ্রাম জেলা থেকে বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তানভীর আল-নাসীফ বলেন, প্রবাসীদের পরিবার, সমাজ ও দেশের পক্ষ থেকে যদি আরো বেশি সহযোগিতা করতে পারি তবে তারা মানসিকভাবে ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অনেক ভালো থাকবে। প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ কর্মী বিদেশে প্রেরণ করলে তারা আরো দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর হবে। এসময় তিনি সেবা গ্রহীতা বা বিদেশ গমনেচ্ছুদের কি সেবা প্রয়োজন সে বিষয় লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিতে অনুরোধ জানান। কারণ এখন অধিকাংশ তথ্যই অনলাইনে পাওয়া যায়। একজন সেবা গ্রহীতা একটু চেষ্টা করলে যে কোন সেবা সম্পর্কে সহজে ধারণা নিতে পারে। এসময় তিনি আগামীতে বিদেশগামী যাত্রীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে আরো বেশি জনশক্তি বিদেশে প্রেরণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত সফল অভিবাসীর গল্প শুনেছি। অন্যদিকে একজন ব্যার্থ অভিবাসীর পক্ষে এখানে এসে তার ব্যার্থতার গল্প শুনানোর সময় নেই। কারণ চাকরী হারিয়ে দেশে ফেরত অথবা অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর করণে তার জীবন ওখানেই থেমে গেছে। অথচ প্রবাসীরা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু পরিবার ও দেশের জন্য দিচ্ছেন, তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। সে টাকা তাদের পরিবার ভাগ্য পরিবর্তনে কাজে লাগায়। অনেক সময় দেখা যায় সে প্রবাসী দেশে ফিরে অবশিষ্ট কিছুই পায় না। তাদের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজে অভিবাসীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ প্রতিনিয়ত কাজ করছেন এবং তাদেরকে রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের রেইস প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের ওরিয়েন্টেশন, কাউন্সেলিং, ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, আত্মকর্মসংস্থানে সহযোগিতা ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা এবং আরপিএল সনদ প্রদানসহ কারিগরি প্রশিক্ষণে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে জনশক্তি অফিস স্থাপনের অনুরোধ জানায়। এর ফলে বিদেশগামী যাত্রীদের আরো বেশি সচেতন করা সম্ভব হবে এবং বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই করা আরো সহজ হবে। প্রয়োজনে যাচাই বাছাই পূর্বক তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রকে আরো সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবো।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *