পুলিশের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি এমপি মোস্তাফিজের, অডিও ভাইরাল

নিজের লোকদের গ্রেপ্তার করলে পুলিশের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। একই সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হকের ‘গায়ে হাত’ না দেওয়ার নির্দেশ দেন এমপি। এমপির এসব কথার জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদকে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর কথোপকথনের অডিওটি গতকাল বৃহস্পতিবারের বলে জানা গেছে। যেটি আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

ওই অডিওটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

এমপি মোস্তাফিজ: আপনি কি বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছেন?
ওসি: স্যার কোথায়, স্যার?

এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়া (বাঁশখালী), পুলিশের হাফিজ গেছে…
ওসি: না না। স্যার, ও তো এখন নেই। ও থাকে ২টা পর্যন্ত। ও তো চলে আসছে স্যার।

এমপি মোস্তাফিজ: কী জন্য গেছে?
ওসি: ওইটা তো আমাদের নিয়মিত ডিউটি করার জন্য, প্রত্যেক বিটে বিটে একটা করে…

এমপি মোস্তাফিজ: আমার কোনো লোককে যদি হাত দেয়…হাত কেটে ফেলব কিন্তু। এটি বলে দিলাম…
ওসি: হাত দিবে না স্যার, দিবে না স্যার। আমি এখনই বলে দিচ্ছি।

এমপি মোস্তাফিজ: ওইখানে নাকি আমাদের লোক ধরার জন্য হাফিজ গেছে…। আমাদের আলমগীর একটা আছে, ওনাকে খুঁজতেছে।
ওসি: ও তো নাই স্যার। চলে আসছে তো স্যার অনেক আগে।
এমপি মোস্তাফিজ: এমনি ঘুরেফিরে থাক। অসুবিধা নেই। আমার কোনো লোকজনের ওপর হাত দিলে, বহুত অসুবিধা হবে।

ওসি: অবশ্যই স্যার। আপনি যেভাবে বলবেন, ওইভাবে হবে। প্রশ্নই আসে না, হাত দিবে না স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: আপনি তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠিয়েছেন।

ওসি: ওই দিন তো স্যার আপনার সঙ্গে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি স্যার। ওই…ওরা আপনার বাড়িতে এমনি নিয়মিত টহল দিতে গেছে। তা-ও সাদাপোশাকে, যাতে কেউ চিনতে না পারে। বিষয়টি স্যার আপনাকে ডিটেইলস বলছি। আরও আমি আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। সাদাপোশাকে পুলিশ পাঠিয়েছি। কাউকে ধরার জন্য যায়নি স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: চাম্বলের মুজিবের (পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া) ওপরও যেন কোনো কিছু না হয়।

ওসি: হবে না স্যার, হবে না। ইনশা আল্লাহ…

অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বিস্মিত হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘ওইটি সত্যিই আপনার কাছে আছে! যদি থাকে, তাহলে যাঁদের থেকে পেয়েছেন, তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করেন। পরে ওসি এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, অডিওটি কার কাছ থেকে পেয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চুপ করে থাকেন, পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পুলিশকে এভাবে বলার অধিকার কারও নাই। আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

এর আগে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের মারধর করে আলোচনায় এসেছিলেন। তারও আগে মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মাঠে নির্বাচনী জনসভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল মোস্তফা চৌধুরীকেও হুমকি দেন মোস্তাফিজ।

গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হারুন মোল্লা বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন। এজাহারে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের পেটানোর অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর এমপি মোস্তাফিজ বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন। এই অপরাধে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সেটির তদন্তও চলছে।

তা ছাড়া চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরীকে পেটানো, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গালি দেওয়ার ভিডিও ভাইরালসহ নানামুখী ঘটনা ঘটানোর কারণে আলোচিত মোস্তাফিজ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *