চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি সংলগ্ন পরীর পাহাড়ের সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন ধরণের ১৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে আজ ১১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটগণ।
উচ্ছেদ অভিযানে সিএমপি’র ৩০ জন পুলিশ সদস্য, পিডিবির প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিমের সদস্যরা উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কোতোয়ালী থানার আন্দরকিল্লা মৌজার বি.এস. ১নং খাস খতিয়ানের বি.এস ৩০২৪ ও ৩০৩০ দাগের ০.১৪৩৬ একর জমি উচ্ছেদ অভিযানে জায়গায় দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখানে উঠানামার যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি খুবই সরু। উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্থাপনাগুলো থাকার কারণে স্থাপনাগুলো দীঘদিনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছিল, চলতে ফিরতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত স্থানে জনস্বার্থে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের পরিকল্পনায় ওয়াশ ব্লক স্থাপন, বসার স্থান নির্মাণ ও জনসাধারণের চলাচলের পথ প্রশস্তকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালী থানাধীন আন্দরকিল্লা মৌজায় অবস্থিত পরীর পাহাড়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ প্রায় ৩০টি সরকারি অফিস ও আদালত রয়েছে। উক্ত আদালত ও অফিসসমূহে প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, ৭/৮ হাজার আইনজীবী ও ৪/৫ হাজার আইনজীবী সহকারীরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লোক সরকারি সেবা নিতে ও বিচারের প্রত্যাশায় যাতায়াত করে। এতে বিপুল পরিমাণ লোকজনের যাতায়াতে ছোট্ট একটি রাস্তায় প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এমনকি মুমূর্ষু অসুস্থ কোনো লোককেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এত বিপুল সংখ্যক সেবা প্রত্যাশীকে বিশ্রামাগার, টয়লেট, সুপেয় পানি কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মত উন্মুক্ত কোনো স্থান এখানে নেই। আন্দরকিল্লা মৌজার বিএস ১নং খাস খতিয়ানের পরীর পাহাড়ে অবস্থিত বি.এস ৩০২৪ ও ৩০৩০ দাগের ০.১৪৩৬ একর সম্পত্তিতে ইতিপূর্বে অনুরূপ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ১৭ জন অবৈধ দখলদার বর্ণিত ভূমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছিলেন।
উক্ত সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তা তারা ছাড়েনি। পরবর্তীতে উচ্ছেদের জন্য নথি নং-০৯/২০১৭ সৃজন করে উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হলে তারা মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন নং-১৮৭৪৪/২০১৭ ও ১৮৮৭২/২০১৭ দায়ের করে ফলে উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। বিগত ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ইংরেজি এবং ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ইংরেজি তারিখে উভয় রীটের নিষ্পত্তি হওয়ায় আজ ১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অবৈধ এ স্থাপনার কারণে এ স্থানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছিলো। অবৈধ স্থাপনা সমূহ পরীর পাহাড়ের রাস্তাকে খুবই সরু করে ফেলেছে। কোন ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটলে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও জেলা পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ উক্ত রাস্তা ব্যবহার করে শত শত আসামি/কয়েদীদের প্রতিনিয়ত বিজ্ঞ আদালতে আনা নেওয়া করে থাকেন। সেক্ষেত্রে যানজটের কারণে দুর্ধর্ষ কয়েদিদের আদালতে হাজির করা হুমকি স্বরূপ।
Leave a Reply