মোদির ১৭৩ ভাষণের মধ্যে ১১০টি মুসলিমবিদ্বেষী: এইচআরডব্লিউ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ১৭৩টি ভাষণের মধ্যে ১১০টি মুসলিমবিদ্বেষী ছিল। এই তথ্য সম্প্রতি ১৬ মার্চ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর মোদির ভাষণের বিশ্লেষণের মাধ্যমে উঠে এসেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানায়, মোদির ১৭৩টি ভাষণের মধ্যে ৬৩ শতাংশে, অর্থাৎ ১১০টি ভাষণে, মোদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন। এর মাধ্যমে সম্ভবত তিনি রাজনৈতিক বিরোধীদের দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন।

১৪ আগস্ট প্রকাশিত এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোদি এমন মন্তব্য করেছেন যা মুসলমান সমাজের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়মিতভাবে মুসলমান ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে সহিংসতা উসকে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির নেতৃত্বাধীন কিছু রাজ্য সরকার মুসলমানদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় ধ্বংস করেছে এবং বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। নির্বাচনের পরও এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে অন্তত ২৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১২ জন মুসলমান পুরুষ ও ১ জন খ্রিষ্টান নারী মারা গেছেন।

এদিকে মোদি নিজে মুসলমানদের বিরোধিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতি তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘আমরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নই,’ এবং ‘হিন্দু-মুসলিম’ প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন না।

তবে এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, মোদি নিয়মিত মিথ্যা দাবি করে হিন্দুদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করেছেন। মোদি বিভিন্ন ভাষণে মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে বলে ভীতি সৃষ্টি করেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত কিছু উদাহরণে দেখা গেছে, মোদি ঝাড়খন্ডের কোডারমায় বলেছিলেন, ‘আমাদের দেবতাদের মূর্তিগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে এবং মুসলিমরা আমাদের বোন ও কন্যাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।’ এছাড়া, উত্তর প্রদেশে তিনি দাবি করেছেন যে বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে রামমন্দিরের ক্ষতি হবে।

এইচআরডব্লিউয়ের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেছেন, মোদি প্রশাসনের অধীন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এক দশকের আক্রমণ ও বৈষম্য নতুন করে সহিংসতা ও নির্যাতনকে স্বাভাবিক করেছে।

এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *