অনিয়ম দূর্নীতি ও চিকিৎসা বেনিয়াদের হাত থেকে জনগনের স্বাস্থ্য সেবা রক্ষা করার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি আজ (২ অক্টোবর) বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবীর এর সাথে তাঁর দফতরে এক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী। জনসংখ্যার দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান। সে কারনেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বসবাস এই চট্টগ্রামে।
কিন্তু এই বিপুল জনগোষ্ঠী পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই ধারন ক্ষমতার অধিক রোগী ভর্তি হন। সিট স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ রোগীকে মেডিকেলের ফ্লোরে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। সরকার নিয়মিত যন্ত্রপাতি ও ওষুধপথ্যের সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নেই জনগনের কাংখিত চিকিৎসাসেবা।
তিনি আরো বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালগুলো চিকিৎসা সেবার নামে রোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত রোগীদের যাচ্ছেতাই লুটতরাজ করছে। নগরীর বিভিন্ন অলি গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ক্লিনিকগুলোর উপযুক্ততা কিংবা প্রয়োজনীয় সংখ্যক যন্ত্রপাতি আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। ক্লিনিকগুলোর বিভিন্ন প্যাথলজী পরীক্ষার রেইট এবং রুমের ভাড়া প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে। তাছাড়া রোগী ভর্তি হওয়ার পূর্বেই রোগীর আনুসাঙ্গিক খরচ সম্পর্কে একটা পূর্ব ধারনা দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে যে, রোগীর বিলের কোন প্রকার ধারনা ছাড়াই রোগীকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হচ্ছে পরবর্তীতে বিশাল অংকের একটা বিল রোগীকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যা নিয়ে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীর এবং রোগীর আত্নীয় স্বজনদের সাথে বাদানুবাদ লেগেই থাকে। হরহামেশাই একই রকম পরীক্ষা একেক ক্লিনিকে একেক রকম রিপোর্ট দিচ্ছে যা রোগীদের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এছাড়াও শুক্রবার এবং শনিবার মেডিকেলে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যায় না ফলতঃ এই দুইদিন রোগীরা আতংকিত অবস্থায় থাকে।
তিনি ক্লিনিক মালিকদেরকে কমপক্ষে মাসে দুইদিন বহিঃবিভাগে দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিও’র একটি অংশ দরিদ্র রোগীদের জন্য বরাদ্ধ রাখার আহবান জানান।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ইতিমধ্যে ৫০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এতো বিপুল জনগোষ্ঠীর তুলনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক।
তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্পের মতো নগরীর প্রতি থানা অথবা দুই থানার কেন্দ্রস্থলে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।
তিনি বন্দরের হাসপাতালেও সাধারণ রোগীদের জন্য ২৫ শতাংশ সিট বরাদ্ধ রাখার দাবী জানান।
সুজন স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর থেকেই বেসরকারী ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ লিয়াকত আলীর সাথে ফোনে কথা বলে জনগনের এসব দুরবস্থার কথা অবহিত করেন এবং বেসরকারী ক্লিনিক মালিক সমিতির সাথেও উপরোক্ত বিষয়ে মতবিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে প্রতিটি ক্লিনিকের সামনে প্রতীকি অনশন পালন করা হবে বলে জানান সুজন।
এছাড়া প্রতিটি ক্লিনিকে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হয়েছে কিনা সেটিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর দফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যাচাই করা হবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্লিনিক্যাল এবং প্যাথলজীক্যাল বর্জ অপসারনের আধুনিক কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। যার ফলে ক্লিনিক্যাল এবং প্যাথলজীক্যাল বর্জগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা শহরে রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে।
তিনি অতিসত্বর সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলাপ আলোচনা করে ইনডোর এবং আউটডোর বর্জ্য অপসারনে একটি সমন্বিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর প্রতি আহবান জানান।
চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবীর নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে তাঁর দফতরে মতবিনিময় করতে আসায় নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানান।
তিনি নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি দাবীর সাথে সহমত প্রকাশ করেন এবং এসব দাবী বাস্তবসম্মত বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় জনগনকে সুলভে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যে প্রয়াস চলমান রয়েছে সে প্রয়াসে নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি সদস্যকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের এতো বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠীর দ্বারে দ্বারে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যে অঙ্গীকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন তা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জকে ধারণ করে আমরাও দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে হ্যাঁ এতো বিপুল পরিমান রোগী সাধারণকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে গিয়ে হয়তো কিছু কিছু অব্যস্থাপনা হতে পারে। আমাদেরও লোকবলের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের সর্বাত্নক চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি নাগরিক উদ্যোগের দাবীগুলো নিয়ে মন্ত্রী, সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক মালিক এবং ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান করেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ আব্দুস সালাম, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল সুকুমার দত্ত, সাইদুর রহমান চৌধুরী, সংগঠনের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, মোঃ শাহজাহান, সোলেমান সুমন, সমীর মহাজন লিটন, সাইফুল্লাহ আনছারী, স্বরূপ দত্ত রাজু, হাসান মোঃ মুরাদ, রাজীব হাসান রাজন, রকিবুল আলম সাজ্জী, মাহফুজ চৌধুরী, সরওয়ার্দী এলিন, মনিরুল হক মুন্না, আজম আলী জুয়েল প্রমূখ।
Leave a Reply