দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে: ফাওজুল কবির খান

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন ব্যবসায়ী বা পেশিশক্তির কাছে দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকারের দায়বদ্ধতা আছে জুলাই অভ্যূত্থানে ১ হাজারের বেশি শহিদ, ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়ে যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, ও অগণিত ছাত্র-জনতার প্রতি। এ দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম’র সভাপতিত্বে সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান মোঃ আমিন উল আহসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’র প্রতিনিধি মেজর মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বক্তব্য প্রদান করেন।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নির্বাচিত সরকার নয়। এ সরকার কোন ক্ষমতা গ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র ছাত্র-জনতার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দয়িত্ব গ্রহণ করলে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তা রক্ষার্থে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে আমরা দেশের সম্পদকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করি। কিছুদিন আগে বাড্ডায় এক মহিলা অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গাড়ির আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা খবর পেয়ে সড়ক বিভাগের সহকর্মীদের নিয়ে সেখানে যায় এবং বাস চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। মানুষের জীবনের কোন ক্ষতিপূরণ হয় না তবুও আমরা দায়বদ্ধতা থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিই।

তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী টানেল আমাদের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। সেটার পাশ দিয়ে আসার সময় দেখলাম সেখানে কোন গাড়ি নেই। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর করে তার সাথে সংযোগ সড়ক হয়ে একটা ইকোনমিক জোন তৈরি করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন দেখেন সেখানে একটা বিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে আর এখানে একটা টানেল তৈরি করা হয়েছে যা অপরিকল্পিত পরিকল্পনার একটা অংশ। ফলে দেশ এখন টানেলের লোকসান বয়ে বেড়াচ্ছে।

ফাওজুল কবির খান বলেন, বাপেক্সের এক-একটি গাড়ির দাম ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আবার জ্বালানি খাতে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভূর্তকি দিতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে যার বার্ষিক রাজস্ব আয়ের কথা ছিল ১৪শ কোটি টাকা। কিন্তু ৬ মাস পরে গিয়ে জানতে পারলাম মাত্র ৩৭ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে। এগুলো উন্নয়নের নামে অপচয় করা হয়েছে। আমি কর্মকর্তাদের সাথে বসেছি যাতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা অপচয় করা না হয়। কারণ অপচয় করার মত অবস্থা এখন আমাদের নেই।

এর আগে তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিডেট এর প্ল্যান্ট পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। সে বিষয়ে তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি তেল শোধানাগার ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে এটা খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে এটা ভেঙ্গে যেতে পারে। দ্বিতীয় আরেকটা রিফাইনারি তেল শোধানাগার তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং অতিদ্রুত নিমার্ণ কাজ শুরু হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *