ব্যাংক ঋণের সিদ্ধান্ত হতো ডিনার পার্টিতে: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিগত দিনে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রহীতার সম্পদের মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করেনি ব্যাংকগুলো। ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো লাঞ্চ কিংবা ডিনারপার্টিতে বসে। এরকম পরিণামহীন ঋণব্যবস্থার কারণে ৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে। এর দৃশ্যমান পরিণাম ফল হচ্ছে- এখন বেক্সিমকো ও এস আলমের মত গ্রুপ শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না।

আজ শনিবার ইআরএফের এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার নুতন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ কিনবে না বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিয়ে জ্বালানি নীতিমালা করছে। নীতিমালায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহায়তা দেওয়া হবে। তবে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হবে না। কিছুটা কম সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে। গ্রাহকের কাছে বিদ্যুতে সরবরাহ করতে সরকারি সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে। সোলার প্যানেল স্থাপনে জায়গার ব্যবস্থা করা হবে।

অর্থনীতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের নিজস্ব মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের মূল বিষয় ছিল ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে অভ্যন্তরীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক–ক্লিন ও বিডব্লিউজিইডি আয়োজনে সহায়তা দিয়েছে।

বিদ্যুতের নতুন ধরনের গ্রাহক ব্যবস্থা ‘মার্চেন্ট বিদ্যুৎ’ সম্পর্কে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নুতন নীতিমালায় মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি গ্রহণ করা হবে। বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন এবং তারাই বিক্রির জন্য গ্রাহক ঠিক করবেন। সরকার স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) থেকে সরে আসতে চায়। সরকার আইপিপির ক্রেতা হওয়ায় এখন টাকা দিতে পারছে না। এই নীতি থেকে সরে আসবে সরকার।

লক্ষ্য অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার না বাড়ার কারণ হিসেবে গত সরকারে সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করেন উপদেষ্টা। সরকারপ্রধান চাননি বলেই এ খাত এগুইনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব। ইকোনমিক জোন নির্মাণের নামে সাধারণ মানুষের অনেক জমি অধিগ্রহণ করলেও সেখানে কিছুই করা হয়নি। এতে সৃষ্টি হয়নি কর্মসংস্থানও।

এছাড়া অর্থায়ন সংকট ও কারিগরি প্রযুক্তির অভাবও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকৃত সমস্যা কোথায়, সেটি চিহ্নিত করা দরকার।

বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে রেল, সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। দেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্র প্রতিযোগিতার অভাব। এ কারণে সব উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এখন আর সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য মন্ত্রী, সচিবদের আত্মীয় হওয়া লাগবে না, চেনা লাগবে না।

ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো: আশানুর রহমান, ক্লিন এর চীফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী প্রমুখ। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *