সৈয়দপুরে টেন্ডার ছাড়াই ২৫টি গাছ কেটে সাবার করেছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি ॥ কর্তৃৃৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমতি না নিয়ে টেন্ডার ছাড়াই ২৫ টি ফলজ ও বনজ গাছ কেটেছেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।

বিগত ৫ দিন থেকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসারের কার্যালয় চত্বরের গাছগুলো কাটার পর তা প্রকাশ্যেই পাচার করে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সরকারী গাছ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কাটার পরও তিনি তা অস্বীকার করে মিথ্যেচার করছেন এবং নানা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টিকে জায়েজ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশাসনকে অবগত করা হলেও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়।

১৩ জানুয়ারি সোমবার বিকালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সৈয়দপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড নয়াটোলা এলাকায় উপজেলা প্রানি সম্পদ অফিসারের কার্যালয়ে প্রধান ভবনের পশ্চিম পাশের বিশালাকৃতির একটি কদম গাছের কাটা গুড়ি ও ডালপালা পড়ে আছে। যা কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে গাছকাটার পাইকার ও কাঠুরেরা তাদের যন্ত্রপাতি ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। এছাড়া অফিস চত্বরের চারপাশের প্রায় ২৫টি গাছ কেটে তা আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে আমগাছ ৬টি, কাঠাল গাছ ৬টি, ঘোড়ানিম গাছ ৬টি, মেহগনি ৫টি, বাতাবি লেবু গাছ ১টি। এ গাছগুলোর শুধুমাত্র গোড়াগুলো দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেক গাছের গোড়াও মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যা মাটি খুড়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওই স্থানের গাছও কাটা হয়েছে। যে গাছগুলোর কোন কান্ড বা ডালপালার কোন হদিস নেই। এগাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা।

স্থানীয়রা জানান, গত প্রায় ৫দিন থেকে প্রানি সম্পদ কার্যালয়ের গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অফিসের লোকজনের কাছে জানতে পারেন যে টেন্ডারের মাধ্যমেই গাছ কাটা হচ্ছে। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা প্রানি সম্পদ অফিসের ভেটেনারী সার্জন ডাঃ রফিকুল ইসলাম জানান, গাছগুলো কাটা হয়েছে অফিস ভবনটি রক্ষার জন্য। গাছের কারণে ভবনটি ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া আমরা ঠান্ডার কারণে অফিসে বসতে পারছিনা। তাই রোদের ব্যবস্থা করার জন্যই গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

উপ-সহকারী প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা দিলাল সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে চরম বিরক্তিভাব প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাপার। এ সামান্য বিষয় নিয়ে আপনারা ছুটে এসেছেন। অথচ এখানে কোন জীবিত গাছই কাটা হয়নি। মরা গাছগুলো অনেকদিন থেকে পড়ে আছে যা জঙ্গলের সৃষ্টি করেছে তাই কেটে ফেলা হয়েছে। এখন এটা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা থাকার কথা নয়। তারপরও যদি কেউ নাক গলাতে আসেন তাহলে আমি অত্যন্ত পজেটিভলি বলছি তা ভালো হবেনা। উপস্থিত সংবাদকর্মীরা তার আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুল হক জানান, মূলতঃ একটি মাত্র কদম গাছ কাটা হয়েছে। তাও গাছকাটার কর্মীদের ভুলের কারণে। অফিসের দক্ষিন-পশ্চিম পাশের বাড়ি ওয়ালার অভিযোগের কারণে ওই গাছটির ডাল কাটার জন্য মজুর লাগানো হয়েছিল। তারা আমার অনুপস্থিতিতে পুরো গাছটিই কেটে ফেলেছে। তাছাড়া আর কোন জীবিত গাছ কাটা হয়নি। উত্তরদিকের মাত্র ৫টি গাছ কাটা হয়েছে। সেগুলো সব মৃত ছিল। তাই ওই গাছগুলো কাটার ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা বন বিভাগের কোন অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।

উপজেলা সামাজিক বনায়ন, নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হাসান জানান, এ ধরণের কোন আবেদন আমাদের এখানে করা হয়নি। বিষয়টি আমরা জানিনা। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ উপজেলা প্রশাসন দেখবেন।

নীলফামারী জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোনাক্কের আলীকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবগত করা হলে তিনি জানান, গাছ কাটার ব্যাপারে কোন প্রকার অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে আজ উপজেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা মুঠোফোনে একটি গাছে ডাল কাটার বিষয়ে অবগত করেছেন মাত্র। এ ব্যাপারে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসিয়াল কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) পরিমল কুমারকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি জানান, একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে যদি তিনি এমন অনিয়মতান্ত্রিক কাজ করে থাকেন তাহলে সেখানে আমার আর কি করা থাকে। তিনি এ ব্যাপারে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেননি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *