২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : দেশে ধর্ষণের মত অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃৃতিকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ নঈমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আদালতে ধর্ষণ সংক্রান্ত ৪ হাজারের বেশি মামলা হলেও তার সিকিভাগও নিষ্পত্তি হয়নি।
ছাত্রসমাজের নৈতিক মূল্যবোধের ক্রমাগত অবক্ষয় হচ্ছে মন্তব্য করে ছাত্রসমাজকে আদর্শিক রাজনীতির প্রতি সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে এসব দৌরাত্ম্যের কারণে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হলে এসব সমস্যা হ্রাস পেত।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার চারদশক পূর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার চার দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপনী দিবসে ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার আহবান জানান তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে গলাকাটা অতিরিক্ত ফি নেওয়ার যে নিয়ম জারি আছে, তা অচিরেই বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ শিক্ষা সামগ্রীর উচ্চহারে দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের বন্দর সমস্যা নিয়ে “পত্রপত্রিকায় বোদ্ধারা মতামত দিচ্ছেন, বন্দর সমস্যা সমাধানে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচানোর বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ হতে হবে। প্রয়োজনে নদী বাঁচাও আন্দোলনে নামতে হবে চট্টগ্রামবাসীকে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সংগ্রাম, গৌরব, ঐতিহ্য ও সাফল্যের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালি ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকালে আন্দরকিল্লা চত্বরে ছাত্রসেনা নগর উত্তর সভাপতি মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ নঈমুল ইসলাম। উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সৈয়দ আবু আজম বলেন, সমৃদ্ধ জাতিগঠনে ছাত্রদের জ্ঞানমুখী রাজনীতিতে ফিরতে হবে। সম্প্রতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ড্রেস কোডের নামে ওড়না নিষিদ্ধের ঘটনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে বিদ্যালয়ে ওড়না নিষিদ্ধের ঘটনা নিন্দনীয়।
প্রধান বক্তা মাছুমুর রশিদ বলেন, দেশে অসুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতির চর্চা হচ্ছে বলে ছাত্ররা এক শ্রেণির বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত ছাত্রসমাজ সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায়।
ছাত্র রাজনীতির নামে আজ চলছে সন্ত্রাস-হানাহানি-টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি, ক্যাম্পাস দখল ও ছাত্র নামধারী মাস্তানদের দাপট। একশ্রেণীর ছাত্র নামধারী বিপথগামী ছাত্র-যুবক সম্মানিত শিক্ষকের গায়ের ওপর হাত তুলতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। এই অশুভ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হয়ে আদর্শিক ছাত্রবান্ধব জ্ঞানমুখী ছাত্র রাজনীতির পথে ফিরে আসতে হবে।
তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে বেকারত্ব রোধে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। সুস্থধারার ছাত্ররাজনীতি সৃষ্টির জন্য চাকসুসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ-মাদ্রাসায় সকল দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা বলেন, চট্টগ্রামে সরকারী কলেজের সংখ্যা অত্যন্ত কম। সরকারী কোন মাদ্রাসাও নেই। এ কারণে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক সন্তান উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি চট্টগ্রামে সরকারী কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নূন্যতম দুটি মাদ্রাসাকে সরকারীকরণের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ছাত্রসেনার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম ও কাজী মুহাম্মদ আরাফাতের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ও আলোচক ছিলেন মুহাম্মদ ফজলুল করিম তালুকদার, আবু নাসের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, জসিম উদ্দিন মাহমুদ, মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন মাহমুদ, মুহাম্মদ ফোরকান রেজা, মুহাম্মদ শফিউল আলম, আব্দুল করিম সেলিম, মাওলানা সোহাইল উদ্দিন আনসারী, হাবিবুল মোস্তফা ছিদ্দিকী, মুহাম্মদ এনামুল হক, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আযহারী, মুহাম্মদ মুছা, মোফাচ্ছেল মোস্তফা টিপু, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, এসএম ইকবাল বাহার চৌধুরী, মুহাম্মদ জাকারিয়া, হাফেজ মুহাম্মদ রফিক।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মুহাম্মদ বাবর আলী। ছাত্রসমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, পাঠ্যপুস্তকে কৌশলে ইসলামি বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নাস্তিকতা সম্পর্কিত পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মাদ্রাসার বইয়ে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সংকুচিতকরণ করা হচ্ছে। এভাবে চললে মাদ্রাসা শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে।
এছাড়া পাঠ্য বইয়ে বাঙালি সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির শিক্ষা যুক্ত করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টি দিতে হবে।
ছাত্রসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য র্যালীতে আরো উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ শেহাব উদ্দিন, মুহাম্মদ এহসান, ফোরকান রেজা, তৌহিদুল হক, শাহাদাৎ হোসাইন, মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন কাদেরী, আবু সায়েম মুহাম্মদ কাইয়্যুম, বেলাল রেজা, শরীফ মুহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম, মুহাম্মদ জিয়া উদ্দিন রায়হান, আহমদুল হক, আব্দুল কাদের, মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, মুহাম্মদ ওসমান গনি, এইচ এম আতিকুল্লাহমুহাম্মদ খালেদ বীন জাহাঙ্গীর, এস এম মেজবাহ উদ্দীন, মুহাম্মদ আকিল হোসাইন, মুহাম্মদ আবিদ আরশাদ, মুহাম্মদ তাহারিফ হোসেন, মুহাম্মদ নুরুজ্জামান রজভী, মুহাম্মদ আনোয়ার, মুহাম্মদ মারুফ রেজা, মুহাম্মদ রবিউল হোসেন প্রমুখ। ছাত্রসমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র্যালীটি নগরীর আন্দরকিল্লা হয়ে লালদিঘী মোড়ে এসে সমাপ্ত হয়।
Leave a Reply