চবি ছাত্রলীগের ২০ কর্মী আটক : লাগাতার অবরোধ, বন্ধ শাটল ট্রেন চলাচল

চবি ছাত্রলীগের

২৪ ঘন্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের সংঘর্ষের পর চবি প্রশাসনের সহযোগীতায় বিভিন্ন হলে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।

বুধবার ২২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালিয়ে তাদেরকে আটক করার তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। অভিযানে বস্তাভর্তি কাঁচের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।

আটককৃতদের মধ্যে ক্যাম্পাস ভিক্তি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয় গ্রুপের ৮ জন এবং ১২ জন আটক হয়েছেন সিএফসি গ্রুপের অনুসারী। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। চবি ছাত্রলীগের ২০ কর্মী আটক

এরা হলেন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের লিটন দাস, সাদাফ, রকিব, রমজান, মাসুদ, আল আলিফ। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রাশেদ, মো. রুবেল এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হাবিবুর রহমান, সাইফুর রহমান, মোসাদ্দেক, রাসেল সরকার। চবি প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান ২০ জন আটকের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের ক্যাম্পাস ভিক্তিক উপগ্রুপ বিজয় এবং সিএফসি গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনার জের ধরে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন বিজয় গ্রুপ। বিবাদমান ছাত্রলীগের একাংশের আহবানে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) সকাল থেকে এ অবরোধ শুরু হয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ও ডেমু ট্রেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন যানবাহন চলাচলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী কোনো ট্রেন ছাড়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ষোলশহরের সহকারী স্টেশন মাস্টার তন্ময় মজুমদার। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

হাটহাজারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রাখতে রাতে অভিযান চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ফোর্স রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বুধবার থেকে শুরু হয় কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বিকেলে ৪০০ মিটার দৌড়ের ট্র্যাকে দাঁড়ানো নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের কর্মী আজাদকে মারধর করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আজাদকে মারধরের ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দুই সংগঠন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে বিজয় গ্রুপের তিন কর্মীকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে সিএফসির কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় বিজয় পক্ষের নেতাকর্মীরা।

হামলায় আহতরা হলেন- বিজয় পক্ষের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবু বক্কর সিদ্দিক, আইন অনুষদের একই বর্ষের ছাত্র অপূর্ব, গণিত বিভাগের রাওফান এবং সিএফসি গ্রুপের মামীম আজাদ।

এদের মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিকের হাতে ও পায়ে গুরুতর জখম হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুটি পক্ষই শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বলে ক্যাম্পাস সুত্রে জানা গেছে।

এদিকে পৃথক অপর এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন একটি খাবারের দোকানে বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন পক্ষের দুই কর্মীকে মারধর করে রেড সিগন্যাল পক্ষ। এতে ২ জন আহত হয়। দুই পক্ষই চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এসব ঘটনার জেরে দোষীদের আটকের দাবিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটক ও শহরগামী শাটল ট্রেন প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। পরে প্রক্টর দোষীদের আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে আটকের আশ্বাস দিলে তারা শাটল ও মূল ফটক ছেড়ে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সবপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *