‘ডে কেয়ার সেন্টার’ নিয়ন্ত্রণে খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রেগুলোকে একটি আইনী কাঠামোয় আনা এবং বিশেষ করে এসব স্থাপনায় তালিকাভুক্ত কর্মজীবী নারীর শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আজ সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে ‘লক্ষ্মীপুর এবং বগুড়ায় আরো দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রণীত আইনের খসড়াও নীতিগত অনুমোদন প্রদান করা হয়।

বৈঠকের বিষয়ে আজ বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অবহিতকরণকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আইনটি প্রণীত হলে নারীর ক্ষমতায়নের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুর পরিচর্যাও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’

তিনি বলেন, যেহেতু যৌথ পরিবার কমে যাচেছ এবং মহিলারা বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন তাই তাদের শিশুদের যাতে কর্মস্থানের আশাপাশের কোথাও লালন-পালন করা যায় সেজন্যই যেসব ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ গড়ে উঠছে, যেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যই এই আইন।

এই আইনের ৭টি অধ্যায়ে ২৫টি ধারা আছে। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-
চার ধরনের শিশু ডে কেয়ার সেন্টারের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, সরকার কর্তৃক ভর্তুকি প্রদান। দ্বিতীয়ত, সরকার অথবা সরকারি কোন দপ্তর বা অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর অথবা সংবিধিবব্ধ সংস্থা বা কোন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কর্তৃক বিনামূল্যে পরিচালিত, তৃতীয়ত, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং চতুর্থত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি সংস্থা বা সংঘ বা সমিতি বা কর্পোরেট সেক্টর বা শিল্প খাত কর্তৃক অলাভজনক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

সচিব বলেন, আইনের ১৭ ধারায় প্রতিটি দিবাযত্ন কেন্দ্রে মাতৃ দুগ্ধ পানকারি শিশুদের জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত অবকাঠামো সুবিধাসম্পন্ন মাতৃ দুগ্ধ পানের স্থান রাখার বিষয় রয়েছে। এছাড়া, ১৮ ধারায় প্রতিটি দিবাযত্ন কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত অবকাঠামো সুবিধা রাখা হয়েছে।

নতুন আইনে জরিমানা বা দন্ডের বিধান সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্ন ও ঘাটতির জন্য ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং কোন সংক্রামক রোগের তথ্য গোপন করলে তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড এবং অনুর্ধ্ব এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এছাড়া, নিবন্ধন না করে এই ধরণের সেন্টার স্থাপন করলে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সনদ প্রদর্শন না করা পর্যন্ত দৈনিক ৫ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে।

লক্ষ্মীপুর ও বগুড়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এজন্য ‘লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ ও ‘বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খন্দকার আনোয়ার জানান, প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মীপুর জেলায় লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বগুড়া জেলায় বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দুটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর ও বগুড়া জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো স্থান নির্ধারণ করা হয়নি বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

দুটি খসড়া আইনে ৫৫টি ধারা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রবর্তন ও সংজ্ঞা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর মধ্যে ৯ ধারায় বিশ্ববিদ্যায় চান্সেলর, ১০ থেকে ১১ ধারায় ভাইস চ্যান্সেলর, ১২ ধারায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ১৩ ধারায় কোষাধ্যক্ষ, ১৮ থেকে ২০ ধারায় সিন্ডিকেট, ২১ থেকে ২২ ধারায় একাডেমিক কাউন্সিল, ২৯ থেকে ৩০ ধারায় অর্থ কমিটি সম্পর্কিত বিধান সন্নিবেশিত আছে।’

এছাড়া আইনের আলোকে ২১টি অনুচ্ছেদ সংবলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধির খসড়া আইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ইউজিসি’র তথ্য মতে-বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৪টি। নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৬টিতে। অন্যদিকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। এর মধ্যে ৯০টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-’এর কনফারেন্স পার্টিজ-’এর ২৫তম বার্ষিক অধিবেশনের শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।

এছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইতালি ও গ্রীস সফর, আসেম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ সহ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দুটি বিদেশ সফর এবং দুটি সেমিনারে অংশগ্রহণ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয় বলেও সচিব জানান।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *