সৈয়দপুরে আত্মসমর্পনের সময় স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামীদের নিয়ে বাদির পলায়ন

.jpg

নিজ স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টার প্রত্যক্ষ আসামীরা পুলিশে আত্মসমর্পনের জন্য থানায় যাওয়ার পথে তাদের ধরে নিয়ে পালিয়ে গেছে মামলার বাদি।

ঘটনাটি ঘটেছে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে। এখন পর্যন্ত আসামীদের ও বাদির কোন হদিস করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে পুলিশ তাদের পলাতক উল্লেখ করে ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। এতে চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে পুরো শহর জুড়ে।

জানা যায়, শহরের গোলাহাটের ঘোড়াঘাট মহল্লার সাবেক ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি কাউন্সিলর হিটলার চৌধুরী ভলুর দ্বিতীয় স্ত্রী সুরভী ইসলাম চৌধুরী পপি কে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে গলা কেটে হত্যার চেস্টা করে হিটলার চৌধুরীর হয়ে কাজ করা জীবন ও রাজা নামের দুই যুবক।

এসময় মায়ের গোঙ্গানীর শব্দে পপির মেয়ে আদ্রিতা টের পেয়ে চিৎকার করলে আশে পাশের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে যায় হামালাকারীরা। এসময় ধ্বস্তা-ধ্বস্তির মধ্যেই গলায় ও হাতে গুরুত্বরভাবে জখম হয় পপি।

পরে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে তাৎক্ষনিক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধিন থাকা অবস্থায় ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে হিটলার চৌধুরী বাদি হয়ে জীবন ও রাজা কে আসামী করে মামলা করেন। এরপর থেকে আসামীরা পলাতক থাকায় হিটলার চৌধুরী তাদের বাবা-মা কে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে জীবন ও রাজা কে তার হাতে তুলে দিতে।

এসময় তাদের আস্বস্ত করা হয় যে, রাজা ও জীবন যেহেতু খুন করেনি শুধুমাত্র হাত কেটে গেছে তাই তাদের কঠিন কোন শাস্তি হবেনা। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও শাস্তি কম করার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে হিটলার চৌধুরী ভলু। সে অনুযায়ী গোপনে গোপনে আসামীদের নিয়ে পরিবারের লোকজন সৈয়দপুরের পাশ^বর্তী রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার একটি খাবারের হোটেলে হিটলার চৌধুরীর হাতে হস্তান্তর করে।

পরে আসামীদের তারাগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাস যোগে সৈয়দপুর শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার বাংলা হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন মোটর সাইকেল মেকার লাল্লুর বাড়িতে নেয়ার পথে রাজার মা পারভীন বেগম-১ ও জীবনের মা পারভীন বেগম-২ কে সৈয়দপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নামিয়ে দিয়ে যায় হিটলার চৌধুরীর লোকজন।

এমন সময় পুলিশ খবর পেয়ে লাল্লুর বাড়িতে হানা দিলে হিটলার চৌধুরী পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আসামীদের নিয়ে মাইক্রোবাস যোগে বাইপাস সড়ক দিয়ে তার গোলাহাটস্থ বাড়িতে নিয়ে যায়।

পরে পুলিশ সেখানে গেলে ভলুর লোকজন পুলিশকে বাধা দেয় এবং বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে হিটলার চৌধুরী আসামীদের নিয়ে পালিয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত পুলিশ তাদের কোন খোজ খবর পায়নি। এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানার এসআই আবু বকর সিদ্দিকী বাদি হয়ে হিটলার চৌধুরীসহ তার সহযোগি ৯ জনের বিরুদ্ধে আসামীদের পলায়নে সহযোগিতার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেছেন।

অন্যান্য আসামীরা হলেন, ইয়াকুব, কাজল, বাবু, সমসের আলী, ইব্রাহিম, আরমান, মোছাঃ ফাতেমা বেগম চৌধুরী, সোহাগ সরকার চৌধুরী। মামলা নং-১০।

এদিকে রাজার মা পারভীন বেগম-১ জানান, হিটলার চৌধুরী মিটিং বসিয়ে আস্বস্ত করেন তোমাদের ছেলেকে আমার হাতে তুলে দাও। তাদের কোন কিছু হবেনা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হবে। তার আস্বাসের প্রেক্ষিতে গত শনিবার রাজা ও জীবনকে তারাগঞ্জ বাজারের একটি খাবার হোটেলে হিটলার চৌধুরী ভলু ও তার লোকজনের হাতে তুলে দেই। তারা সেখান থেকে সৈয়দপুর টার্মিনালে এসে আমাকে ও জীবনের মাকে নামিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি হিটলার চৌধুরী ভলু আমার ছেলে রাজা ও জীবনকে পুলিশে না দিয়ে তাদের নিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এখন চরম জীবনের নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে বসবাস করছি। পাশাপাশি ছেলেরা বেঁচে আছে কি না সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।

এ ব্যাপারে হিটলার চৌধুরী ভলুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পুলিশ আসামী ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা কখনও বলে আসামীরা ভারতে আবার কখনও বলে দেশে আছে। কিন্তু তাদের কোন খোজ দিতে পারেনি। অথচ আমি আসামীদের ধরতে পেরেছি এবং সময় মত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আসামীদের পুলিশে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু তার আগেই পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার বৃদ্ধ মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং অস্ত্র বের করে আমাকে গুলি করার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছে। আমি পলাতক কথাটা সত্য নয়, আমি আমার বাড়িতেই অবস্থান করছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *