পাপিয়ার কল লিস্টে ১১ মন্ত্রী ৩৩ এমপি

বহুল আলোচিত নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউকে গত শনিবার র‌্যাব বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে তার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, গ্রেপ্তারের পর পাপিয়ার মোবাইল ফোনগুলো জব্দ করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

এই মোবাইল ফোনগুলোতে পাপিয়ার অনেক ভিআইপির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, পাপিয়ার মোবাইলে ১১ মন্ত্রীর মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে। এই মোবাইল নাম্বারে পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

এছাড়াও পাপিয়ার মোবাইলে ৩৩ এমপির তালিকা পাওয়া গেছে। এই ৩৩ এমপির সঙ্গে পাপিয়া নিয়মিত যোগাযোগ করতো। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শনিবার যখন তাকে বিমানবন্দরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা (র‌্যাব) আটক করে তখনও পাপিয়া তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়েছিলেন, তাদেরকে দেখে নেওয়ার জন্যও শাসিয়েছিলেন। তাদেরকে এটাও বলেছিলেন, আমি কে তোরা জানিস?

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, র‌্যাবের অমনমনীয় দৃঢ়তার মুখে শেষ পর্যন্ত পাপিয়া নমনীয় হন এবং তারপর তিনি তার অপরাধগুলো স্বীকার করতে থাকেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, এই কল লিস্ট মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে আনা হয়েছে। এই ১৫ দিনের রিমান্ডে যাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ, যাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন, তাদের ব্যাপারে তথ্য বের করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

এরআগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তারকা হোটেলে এসকর্ট সার্ভিস দিতে বাধ্য করা হতো তরুণীদের। তার আগে পার্টিতে মদ পান করিয়ে মাতাল করা হয়। মাতাল অবস্থায় হোটেলের রুমে তরুণীর কক্ষে ঢুকানো হয় খদ্দেরকে। এভাবেই নির্যাতনের শিকার হন তার সংগ্রহ করা প্রায় সকল তরুণী। পরবর্তীতে পাপিয়ার হাত থেকে মুক্তি চাইলেও বিপাকে পড়ে যান তারা। কারণ ইতিমধ্যে মদ্য পান ও পরবর্তী দৃশ্য গোপনে ধারণ করা হয়েছে ক্যামেরায়।

কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এভাবেই জিম্মি করা হয় তরুণীদের। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এভাবেই তরুণীদের ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করতেন পাপিয়া। সুন্দরী তরুণীদের পাঠানো হতো প্রভাবশালীদের বাসায়, হোটেলের রুমে। এছাড়াও ভয়ঙ্কর অনেক অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ।

পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তরুণীদের একান্ত মুহূর্তের দৃশ্য রয়েছে। কিছু ধনাঢ্যদেরও এসব ভিডিও ক্লিপ দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন পাপিয়া। কয়েক ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, রাতের পার্টির দৃশ্য। গর্জিয়াস মেকাপে সেজে পাপিয়া উপভোগ করছে পার্টি। মেয়েরা সেখানে নাচছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোনো মেয়ে আপত্তি করলে ভিডিও ক্লিপ দিয়ে ব্ল্যাকমেইল ছাড়াও লাঠি দিয়ে পেটাতেন যুব মহিলী লীগের এই নেত্রী। লাঠি হাতে সোফায় বসে পার্টি উপভোগ করার ভিডিও পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনসহ সহযোগীদের গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল জানিয়েছিলেন, তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকা হলেও পাপিয়া গত তিন মাসে শুধু একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন! এ ছাড়া তার নামে একটি হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সব সময় বুকড থাকত। ওই হোটেলেই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল সাতটি মেয়ে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার, বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *