খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আদেশ দেন।

খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জামিন আবেদনের ওপর দেয়া আদেশে আদালত বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা তার মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে হবে। তার চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালেই সম্ভব।

তবে খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ‘অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট’ নিতে সম্মতি দিলে, দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

হাইকোর্ট বলেছে, উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বোর্ড চাইলে নতুন কোনো বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

এদিন সকালে হাইকোর্ট বেঞ্চে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের পাঠানো খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই হাসপাতালের অধীনে উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়া সম্মতি দেননি।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সাথে ছিলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমেদ, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সগীর হোসেন লিওন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান।

এর আগে সকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: আলী আকবর। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ওবায়দুল হাসান তা পড়ে শোনান।

এরপর আদেশ দিতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন রোববার পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু আদালত তাতে রাজি না হলে আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দেয়ার আবেদন জানান। এরপর আদালত আদেশের জন্য ওই সময় রাখেন।

বিরতির সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদন করেন। পরে এ আবেদনের উপর শুনানি হয়।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং শুরু হলে কী অবস্থা তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে এ প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিন রাখেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশ অনুসারে বুধবার বিএসএমএমইউ থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আজ সকালে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। পরে সেটি পড়ে শোনান বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক।

সেখানে বলা হয়, খালেদা জিয়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও প্রতিস্থাপনজনিত হাঁটুর ব্যথায় (অস্টিও-আর্থ্রাইটিস) ভুগছেন। অন্য সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ শুরুর বিষয়ে তিনি সম্মতি দেননি। এমনকি সেই চিকিৎসার জন্য যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, সেগুলোও করা যাচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কেন সম্মতি দেননি, সেটা জানতে তার সাথে কথা বলতে চান তিনি।

সেজন্য সময়ের আবেদন করে তিনি জামিন প্রশ্নে আদেশের বিষয়টি রোববার পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার আবেদন করেন। তবে তাতে সাড়া না দিয়ে বিচারক বলেন, খালেদা জিয়া কেন সম্মতি দেননি, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার জামিনের বিষয়ে বেলা ২টায় আদেশ দেয়া হবে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে তা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *