‘স্কোয়াশ’ চাষেই লাখপতি রাউজানের জুয়েল

নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান (চট্টগ্রাম) :
পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে যোগ দেন রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৩ নং খানপাড়া ওয়ার্ডের মোঃ আমিনের পুত্র মোঃ জুয়েল। বেতনও ছিল বেশ ভালো।

তবে চাকুরির চার দেওয়ালের জীবনটা বেশীদিন ভালো লাগেনি জুয়েলের। চাকুরিরত অবস্থায় ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজ উদ্যোগে কিছু একটা করার উপায় খুঁজতে খুঁজতে এক সময় স্কোয়াশ চাষের বিষয়টি মাথায় ঢুকে তার। বেশ কিছুদিন স্কোয়াশ ফলনের উপর ইন্টারনেটে সময় কাটিয়ে সিন্ধান্ত নেন চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নিজেই কিছু একটা করবেন।

চাকুরি ছাড়ার পর খোঁজখবর নিয়ে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, যশোরে গিয়ে স্কোয়াশ চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে এসে নিজেই নেমে পড়লেন স্কোয়াশ চাষে। ভালো একটি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে একজন শিক্ষিত যুবকের এই প্রচেষ্টাকে খুব ভালোচোখে দেখেনি বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বছর দুয়েকের মাথায় এসে এখন জুয়েলের ভাগ্য পরিবর্তন দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্কোয়াশ চাষে।

তার এই কাজে শুরু থেকেই আব্দুস শফি, মাকসুদ, ফরিদ, মাহফুজ, আকতার হোসেন ও মামুন স্কোয়াশ চাষে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

সম্প্রতি রাউজানের পাহাড়তলী চৌমুহনী এলাকার সন্নিকটে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পিংক সিটি-২ এর নিকটবর্তী কৃষি জমিতে ১ হেক্টর আয়তনের জমিতে জুয়েলের স্কোয়াশ চাষ পরিদর্শনে যান রাউজান উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) সনজীব কুমার সুশীল ও উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (পাহাড়তলী) মোঃ এমদাদুল ইসলাম।

সেখানেই এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় জুয়েল জানান, খোঁজ নিয়ে উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করে পরিচর্যার মধ্য দিয়ে সেগুলো চারায় রূপান্তর করে জমি চাষাবাদের উপযোগী করে সেখানে চারাগুলো রোপন করেন। বর্তমানে তার চারাগাছ গুলোতে ভালো ফলন এসেছে। ১ হেক্টর জমিতে স্কোয়াশ চাষাবাদ করতে উন্নতজাতের মানচিং পেপার প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে তার ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়। যা সাধারণ প্রক্রিয়ায় করলে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো। তিনমাস মেয়াদী এই স্কোয়াশ ফলনে সবকিছু ঠিক থাকলে ৮ থেকে নয় লক্ষ টাকার মতো স্কোয়াশ বিক্রি করা সম্ভব। পাশাপাশি কদলপুর ইউনিয়নেও ২ কানি জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন জুয়েল।

জুয়েল জানান, তার জমিতে বর্তমানে ৭ হাজার চারা আছে। প্রতিটি চারায় ১০টির মতো স্কোয়াশ ফলন আসে। তার জমি থেকে মৌসুমে ৩০ টনের মতো ফলন আসবে। প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা হিসেবে তিনি স্কোয়াশগুলো রাজধানীর কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রামের কাজির দেউরি, চকবাজার,বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন এলাকার পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রী করেন। যেগুলো নগরীর বিভিন্ন বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রী হয়।

স্কোয়াশ চাষাবাদ নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জুয়েল বলেন, আমি সমাজ থেকে বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করতে চাই। সে লক্ষ্যে স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী যুবকদের আমি পরামর্শ আর সহযোগিতা করতে চাই। পাশাপাশি আমার চাষাবাদ সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই।

সরকারি ঋণ সুবিধা পেলে তিনি আরো বড় পরিসরে স্কোয়াশ চাষাবাদ করতে চান। আমি চাই যুবকরা চাকুরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে কিছু একটা করে দেখাবে।

উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (পাহাড়তলী) মোঃ এমদাদুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকেই তিনি জুয়েলের আগ্রহ দেখে তাকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। বর্তমানে জুয়েলের জমিতে মানচিং পেপার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্কোয়াশ চাষাবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি সেক্স ফেরোমন ও ইয়েলো স্টিকি টেপ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চারাগাছে পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব তেমন একটা নেই। ফলে সবুজে সয়লাব হয়ে আছে স্কোয়াশ ক্ষেত।

রাউজান উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা (উন্নয়ন শাখা) সনজীব কুমার সুশীল বলেন, বর্তমানে দেশে বারি-১ ও বারি-২ জাতের স্কোয়াশ চাষাবাদ হচ্ছে। দেশের বাইরে এই ফলের প্রচুর চাহিদা আছে। উপজেলার ডাবুয়া, হলদিয়া, কদলপুর, ও পাহাড়তলীতে স্কোয়াশ চাষাবাদ হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর স্কোয়াশ চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। রোপনের চল্লিশ দিনের মধ্যে এই চারাগাছগুলিতে ফলন আসে। বিশেষ উর্বর জমি আর ঝরঝরে মাঠি স্কোয়াশ চাষের জন্য উপযোগী। ছত্রাকনাশক স্প্রে, আর জমিতে পরিমানমতো জৈব সার ব্যবহার করে এই চাষাবাদে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

শিক্ষিত, উদ্যোমী যুবক জুয়েল লোভনীয় চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সেভাবে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক স্কোয়াশ চাষাবাদে এগিয়ে এসেছেন সেটি অনুরকণ করলে সমাজ থেকে বেকারত্ব ঘুচে যাবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *