ভারতের রাজধানীর নর্দমায় মিলল পচা গলা ১১ মরদেহ

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবের পর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির নর্দমায় মিলছে লাশ। মঙ্গলবার পর্যন্ত গত পাঁচ দিনে ১১টি পচা গলা লাশ ভেসে উঠেছে।

সব মিলিয়ে কয়েক দিনের ওই সহিংসতায় অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৩০০ জন।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, প্রতিদিনই হাসপাতালে স্বজনদের খোঁজে মানুষের ভিড় বাড়ছে। অনেকেই সারা দিন বসে থেকে দিন শেষে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে।

বিতর্কিত সিএএকে কেন্দ্র করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লির উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সামনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ মুসলিমদের অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাট বেছে বেছে আগুন ধরিয়ে দেয় উগ্রপন্থীরা।

টানা তিন দিন ধরে চলে এ হামলা, অগ্নিকাণ্ড। ২৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নর্দমায় প্রথম গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা অঙ্কিত শর্মার লাশ ভেসে উঠেছিল। তাকে সহিংসতার মধ্যে উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

সর্বশেষ রোববার ও সোমবার নর্দমাতে পাওয়া গেছে পাঁচটি অজ্ঞাত মৃতদেহ। মরদেহগুলোর বেশির ভাগই পচে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষা করে এসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।

তবে ভেসে ওঠা মৃতদেহগুলোর সবই দিল্লির সহিংসতায় নিহত কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছে পুলিশ।

দিল্লিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক চিত্র প্রশাসনের তৈরি করা একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্টে উঠে এসেছে।

উত্তর-পূর্ব জেলার তৈরি ওই রিপোর্টে বলা হয়, এখন পর্যন্ত সহিংসতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১২২টি বাড়ি, ৩২২টি দোকান এবং ৩০১টি গাড়ি।

সোমবার প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান, চূড়ান্ত রিপোর্টে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জানা যায়, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে তৈরি ১৮টি দলের পেশ করা তথ্যের ভিত্তিতেই ওই অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নির্দেশে এই দলগুলো উত্তর-পূর্ব দিল্লির সহিংসতা বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ‘ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে’ চালিয়েছে।

দাঙ্গার পর থেকে এখনও প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের খোঁজে হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনেরা। মর্গে নতুন কোনো লাশ এলে সেখানে দৌড়াচ্ছেন।

গুরু তেজ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে আসা সোনিয়া বিহারের বাসিন্দা পঙ্কজ বলেন, ‘আমার মা পুনম সিং এবং ভাগ্নে শাগুন ২৭ ফেব্রুয়ারি এ হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য। তারপর থেকে তাদের খোঁজ মিলছে না। লোক নায়ক হাসপাতাল, জগপ্রদেশ চন্দ্র হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি, পাইনি। আমার মায়ের ফোনও বন্ধ পাচ্ছি।’

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *