ইয়াবা-হেরোইনের বিকল্প ব্যথানাশক ট্যাবলেট!

দেশের প্রথম সারির বেশকিছু ওষুধ কোম্পানির ব্যথানাশক ট্যাবলেট ব্যবহার হচ্ছে মাদক হিসেবে। এসব ট্যাবলেট বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরপরও পাইকারি দোকান ও ফার্মেসিতে সরবরাহ করছে কিছু কোম্পানি।

দেখে মনে হচ্ছে ইয়াবা কিংবা হেরোইন সেবন করছে এই দুই তরুণ। সেবনের পদ্ধতিও একই। তবে নাম ভিন্ন। ব্যাথানাশক ট্যাবলেট। তাই বাজারেও সহজলভ্য। নেশাও হয়। অথচ দাম একেবারেই কম। আর সেই সুযোগেই নতুন এই নেশায় আসক্ত এই তরুণেরা।

ব্যাথানাশক ট্যাবলেটে এক তরুণ বলেন, ‘রিকশা গ্যারেজে গিয়ে দেখি রিকশাওয়ালা খাইতেসে। পরে উনারা আমারে বলসে টান দিয়ে দেখতে পারো। ১-২ টান দিয়ে দেখি আমার খাইতে ভালো লাগতেসে। তারপর আমি খাওয়া শুরু করসি।’

আসক্ত আরেক তরুণ জানান, ‘ফার্মেসিতে গেসিলাম, প্রথমদিন রাখলো ৫৫ টাকা। পরেরদিন গেসি আর ৬০ টাকা রাখসে। কখনও কিছু বলেনা, টাকা দিলেই দিয়ে দেয়।’

এসক্যাফে, ইনসেপ্টা, এসিআই, স্কয়ার, হেলথকেয়ারের মতো ওষুধ কোম্পানির এই ব্যথানাশক ট্যাবলেট এক শ্রেনির মাদকাসক্ত ব্যবহার করছে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে। একটি চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিম আবিষ্কার করে মাদকের এই নতুন বাজার।

চুরির ঘটনায় দুইজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। কোথা থেকে কিভাবে তারা সংগ্রহ করে এসব ট্যাবলেট তা জানতে পারে পুলিশ। অভিযান চালানো হয় উত্তরার বাউনিয়া এলাকার দুটি ফার্মেসিতে। আটক করা হয় দুজনকে। অবৈধভাবে ফার্মেসিতে এসব ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়।

ফার্মেসির এক বিক্রেতা বলেন, ‘ভ্যানচালক, রিকশাচালক ওই রকম লোক এসেই চাইতেসে ভাই একটা ট্যাবলেট দেন। দেখি যে এটাতে লাভ হচ্ছে অনেক তাই আমরাও এটার প্রতি আকর্ষণ পাই অনেক।’

আরেক ওষুধ বিক্রেতা জানান, ‘মিটফোর্ড থেকে আসেনা, এখানে যারা ব্রোকার আছে তারাই আমাদের দেয়।’

এইসব ট্যাবলেটে ইয়াবার উপাদান আছে এই অভিযোগ ছিলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছেও। এর অপব্যবহার রোধে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অন্যান প্রতিনিধিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বাজারে সরবরাহকৃত এসব ওষুধ ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়ার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখেও তা বাজারজাত করা হচ্ছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল অথবা প্রাইভেট ক্লিনিকে এ ওষুধটা পাওয়া যাবে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা যারা যেমন ফার্মেসিতে আমরা এই ওষুধ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তারপরও যদি তারা এই ওষুধ রাখে ও বিক্রয় করে তাহলে অপরাধ হবে এবং সেক্ষেত্রে আমরা অ্যাকশন নিবো। আমাদের ড্রাগস অফিসিয়ালরা মনিটরিং করছে যেন এটা কোনভাবেই বিক্রি না হয়। দুই-একটি জায়গায় এটা হতে পারে তবে এটা আমরা কন্ট্রোল করে ফেলবো।’

পুলিশ আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, ‘শুধু বেশি লাভের জন্য এই ডিসপিনসারি ও হাতুড়ে ডাক্তার বা এই লোকগুলো অপ্রাপ্তবয়স্ক ও আরও কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক কর্মজীবী লোক আছেন যাদের প্রেসক্রিপশন নেই, তাদের হাতে এই বিষগুলো তুলে দিচ্ছেন। আমরা এই ওষুধ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবো কিছু মুনাফা লাভের জন্য মানুষের হাতে এই বিষ তুলে দিয়ে যুব সমাজ ও কর্মজীবী সমাজকে ধ্বংস করবেন না।

খুচরা বাজারে সরবরাহের দায়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *