তাসফিক আব্দুল্লাহ চৌধুরী : কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব প্রথম চীনে দেখা গেলেও এটি এখন বিশ্ব মহামারিতে পরিণত হয়েছে চোখের পলকেই । কখন সমাপ্তি ঘটবে এই গুমোর বাধা পরিবেশের! সবার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে কোভিড় -১৯ বা করোনাভাইরাস। করোনা ভাইরাস সাধারণত পশু পাখির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। হঠাৎ করেই যে এই ভাইরাস মানুষের মাঝে দেখা দিতে শুরু করবে কে বলতে পারে। চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আজ থেকে প্রায় ৮৫ দিন আগে এই করোনা ভাইরাসের কথা জানিয়েছিল। আর এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবীর উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেলো। চীনের উহান প্রদেশে এটি প্রথম দেখা গেলেও বিশ্বের প্রায় ১৯৬ টিরও বেশি দেশ এর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিউনের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি, স্পেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানতে পারে, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মানুষ অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর ক্রমেই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারি হিসেবে ঘোষনা করে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৩০০০ এর বেশি, ইতালিতে প্রায় ১৫০০ জন, স্পেনেও সমান সংখ্যক লোক এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা লক্ষ পৌছেঁ গেছে । এর প্রভাবে ব্যবসা- বাণিজ্য, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান থেকে শুরু করে সমাজের কোন কিছুই বাদ যায় নি।
গবেষকরা দিনরাত এক করে কাজ করছে এর প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য। এর মধ্যে আশার খবর শুনিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক করোনা ভাইরাসের টিকা আলফা ডি টু আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করেছেন।
বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস তার জাল বিস্তার করা শুরু করেছে। ইতমধ্যে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পত্র- পত্রিকা পড়ে আমরা জানতে পেরেছি।
আইইডিসিআর এর ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে এপযর্ন্ত ৩৯ জন করোনা রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এর মাঝে ইউরোপের দেশগুলোর সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে কয়েক লক্ষ মানুষ এর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র প্রতিসেধক হলো সচেতনতা। এই মুর্হুত্বে সচেতনতায় হলো আমাদের একমাত্র অস্ত্র করোনা মোকাবেলায়।
বিভিন্ন সংস্থা করোনা মোকাবেলা করতে সাধারণ মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ধরনের প্রচার পত্রের মাধ্যমে তারা এই কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় হোম কোয়ারান্টাইনের কোন বিকল্প নেই।
জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, দুই হাত সাবান বা সেনিটািজার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। মানুস থেকে মানুষের দূরত্ব হবে তিন ফিট। প্রবাসীদের সংস্পর্শে আসলে ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার দিকে তাঁরা জোর দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তাদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় অতিমাত্রায়। তারা মনে করেন, ‘আল্লাহ এই রোগ দিয়েছে আল্লহই আমাদের রক্ষা করবে। এসব সচেতনতার কি প্রয়োজন!’
যেদেশে একটা মাস্ক বেশি দামে বিক্রি হয়, জীবাণু নাশক সামগ্রীর অভাব দেখা দেয় সেই দেশ কতটুকু এর মোকাবেলা করতে পারবে তা সময়ই বলে দিবে। হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা লোকগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে ইচ্ছে মতো, কেউ আবার স্বপ্নের মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রতিসেধক আবিষ্কার করে ফেলে, করোনা মোকাবেলায় স্কুল কলেজ বন্ধ দিলে পর্যটন স্থানগুলোতে লোকের ভিড় বেড়ে যায়। সারাবিশ্ব যেখানে করোনা ভয়ে কাপঁছে সেখানে আমরা এটাকে হালকা ভাবে নিয়ে চরম মুল্য দিতে হবে না তো? জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু সচেতন সেই প্রশ্নটায় বার বার উঠে আসছে।
আমাদের দেশের রেল স্টেশন, পাবলিক যানবাহন গুলো জীবাণু নাশক স্প্রে করা অতিব জরুরি। পর্যটন স্থানগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত অতি দ্রুত। জীবাণু নাশক সামগ্রী, সাবান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম যেন বৃদ্ধি না পায় তারজন্য বাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে। অলি-গলিতে মাইকিং করা উচিত সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য।
আমরা হয়তো হংকং, তাইওয়ানের মতো যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারব না। কানাডার মতো সকল মানুষের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান দিতে পারব না ঠিক কিন্তু আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে পারি। নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।
আমাদের নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। তবে আশা জাগানিয়া খবর হচ্ছে, দেশের কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মেধাবী ফার্মেসিষ্ট হ্যান্ড সেনিটাইজার তৈরি করে সচেতনতা সৃষ্টি করছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার কিট তৈরি করা শুরু করেছে এবং সরকার তাদের সহযোগিতা করার কথা ব্যক্ত করেছেন।
এই মহামারি মোকাবেলা করতে হলে আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এক হলে জয়, একা হলে পরাজয়।
তাসফিক আব্দুল্লাহ চৌধুরী
ইংরেজি বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply