করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা, মশা এবং ডেঙ্গুর হাত থেকে চট্টগ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সেবা সংস্থা এবং প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা প্রদান করায় চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি আজ মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়তই দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন। কখনো ভিডিও কনফারেন্স, কখনো প্রেস কনফারেন্স, কখনো সংবাদ সম্মেলন করে এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করছেন। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের লড়াইয়ে দেশবাসীকে সাহস ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লড়াইয়ে বিজয়ের আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
তিনি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শের পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজের সব স্তরের পেশাজীবী মানুষ এই প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে যেসব সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই প্রতিদিন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা, উৎসাহ এবং কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার ফলে জনগন এ ভাইরাস রোধে অনেকখানি সচেতন হয়েছে এবং প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হচ্ছেন না বলে মত প্রকাশ করেন সুজন।
তবে বর্তমান সময়ে ঘরে থাকার পথে প্রধানতম অন্তরায় হচ্ছে মশা, বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি এবং নগরীর কিছু কিছু জায়গায় অনিয়মিত পানি সরবরাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জনগনের হৃদয়ের কথা উপলব্দি করতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করার ফলে নগরবাসী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দ্রুতই মুক্তি পাবে বলে আশাবাদও ব্যক্ত করেন সুজন।
তিনি আরো বলেন প্রবাসীরা আমাদের দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য একটা অংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। প্রতি মাসেই রেমিটেন্স বাড়ছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সুসংবাদও বটে। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লকডাউনের ফলে আমাদের প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতে করে খাদ্য চিকিৎসাসহ নানামূখী অসুবিধার সম্মূখীন হচ্ছেন প্রবাসীরা। এ অবস্থায় কারো কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাওয়ার মতো অবস্থাও তাদের নেই। তিনি বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের আর্থিক এবং খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে দূতাবাসগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বর্তমান করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে ঘরে রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যবসায়ীদেরকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য রাখা থেকে বিরত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং সেনাবাহিনীর নিকট আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সুজন এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি এবং ওয়াসার অনিয়মিত পানি সরবরাহ বন্ধ করার বিনীত আবেদন জানিয়ে বলেন সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা প্রদান করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকা। তিনি দ্রুততার সাথে বিদ্যুতের পরিস্থিতির উন্নতি এবং নগরবাসীর নিকট নিয়মিত সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত আবেদন জানান। এছাড়া নাগরিক উদ্যোগের অনুরোধের প্রেক্ষিতে নগরীর যে সকল এলাকায় ওয়াসার পানির স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছিল সে সকল এলাকায় ভাউচারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রদান করায় ওয়াসার এমডি’র নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং এ ধারা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।
তাছাড়া নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় প্রায় অনেকদিন ধরে পানি না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুজন বলেন এর ফলে ঐ এলাকায় বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ নিদারুন কষ্ট ভোগ করছে। ফলত বাধ্য হয়েই বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা অনিরাপদ পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী। তিনি এ অবস্থা থেকেও এলাকাবাসীকে সহসা মুক্তি দানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট উদাত্ত আহবান জানান।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় যারা স্ব-উদ্যোগে লকডাউন করেছে তাদেরকে নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিবাদন জানান তিনি। নগরীর অবশিষ্ট বাকি এলাকায়ও জনগনকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করা, আড্ডা মারা বন্ধ করা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মহল্লার সর্দার এবং যুব সমাজের প্রতিও উদাত্ত আহবান জানান সুজন।
Leave a Reply