ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃজেলাবাসীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে লকডাউন করেছে এলাকাবাসী।
বুধবার (৮ এপ্রিল) উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শ কোলনি, রসুলপুর, বাঙালিপাড়া, বিহারীপাড়া, গুচ্ছগ্রাম ও বাহাদুরপাড়ার সব সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেয় তারা। আগাম সতর্কতা হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়টি গ্রামের প্রবেশ পথ ও বের হওয়ার পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে; পাশাপাশি টানানো হয়েছে লাল পতাকা। গ্রামে কোনো যানবাহন বা মানুষ প্রবেশ করার সময় জীবানুনাশক স্প্রে দেয়া হচ্ছে এবং প্রবেশ পথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া হ্যান্ড মাইকিং এর মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে ঘরে থাকার জন্য।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই নিজেদের রক্ষার স্বার্থে ছয়টি গ্রাম লকডাউন করে দিয়েছেন। ফলে এসব গ্রামে বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারছে না। আর স্থানীয়রাও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাইরে যাচ্ছেন না।
আদর্শপুর কলোনি গ্রামের মুশফিক আল মারুফ বলেন, মঙ্গলবার রাতে রাতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-গলাব্যাথা নিয়ে ঢাকার আদাবর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচজন এ গ্রামে এলাকায় আসে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হলে সকালে চিকিৎসকরা এসে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে এবং সবাইকে নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়। এতে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
একই গ্রামের আব্দুলহ আল নোমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগে ৬টি গ্রামের আটটি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে বাঁশের বেড়া ও লাল পতাকা দিয়ে ঘিরে লকডাউন করা হয়েছে।“খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এলাকার মানুষদের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বাইরের কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।”
বাঙালিপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান সাজু বলেন, “এলাকার মানুষদের স্বার্থে লকডাউন করা হয়েছে, সবাই যেন ভাল থাকে, সুস্থ্ থাকে। এলাকা যেন সুরক্ষিত থাকে এবং বাইরের কোন মানুষ যেন এলাকায় না আসতে পারে সেজন্য এ উদ্যোগ।
“বাহাদুরপাড়ার হারুন অর রশিদ বলেন, আড্ডা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন অনেক বহিরাগত যুবক তাদের গ্রামে আসে। তাদের এ বেপরোয়া চলাফেরায় গ্রামে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই সচেতন গ্রামবাসী এ উদ্যোগ নিয়েছেন।”
এলাকাবাসীর এমন উদ্যোগে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে সদর উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে
বলেন, “সচেতন গ্রামবাসী নিজেদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এভাবেই প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ সচেতন হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।”এ সময় সবাইকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজুর রহমান সরকার ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজকে বলেন, বুধবার সকালে আদর্শকোলনি গ্রাম থেকে দুইজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে; নমুনাগুলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।“কাল জানা যাবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা। তাদেরসহ পাঁচজনকে আলাদা ভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।”
Leave a Reply