অ আ আবীর আকাশ ::: লক্ষ্মীপুরে এতো মুড়ি-মুড়কির দোকানের মতো হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি হচ্ছে যে, তা সত্যিই আমাদের মতো সাধারণ চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের কাছে উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউসি সেকেন্দার আলী নামের এক ব্যক্তি এক ঘন্টায় দু’বার দুই প্যাথলজিতে রক্ত পরীক্ষা করেন। দুইবারে দুই রকম রিপোর্ট এসেছে বলে তিনি দুটোরই ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন -‘এক ঘন্টায় কি মানুষের রক্তের গ্রুপ বদলে যায়?’
দেশব্যাপী চিকিৎসাসেবায় নৈরাজ্য আর অনিয়মের কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন-‘ দেশে মুড়ি-মুড়কি দোকানের মত হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি হচ্ছে। এতো বেশি এসবের উদ্ভব ঘটেছে যে তাতে সাধারণ জনগণ চিকিৎসা সেবার নামে উল্টো হয়রানি হচ্ছে। এসবের একটা সুনির্দিষ্ট বিহিত করতে হবে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসবে তা তো হবে না। চিকিৎসা এখন সেবা না হয়ে টাকা কামানোর বড় ফাঁদে রূপান্তরিত হয়েছে।’ এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরো বলেন-‘ রক্ত গ্রপিং করতে এক টাকার চেয়ে অনেক কম লাগে, কিন্তু সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানে কত টাকা করে নেয়?
সত্যিই মুড়ি-মুড়কি দোকানের মত হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি টাকা কামানোর একটি সহজ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকজন মিলে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে খুলে বসছে চিকিৎসা কেন্দ্র। এরপর সদর হাসপাতাল বা জেলার শিক্ষানবিশ কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে চুক্তি করে লিফলেট, ব্যানার বানিয়ে প্রতিনিধি দৌড়ে গ্রামাঞ্চলে ফার্মাসিস্টদের কাছে। একজন রোগী পাঠালে রোগীর খরচ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর কমিশন পায় ফার্মাসিস্ট। দরকারি বেদরকারি পরীক্ষা দিয়ে এমনকি অপ্রয়োজনীয় ঔষধ লিখেও রোগী বা তার আত্মীয় স্বজনদের সর্বস্বান্ত করা হয়।
এসব প্যাথলজিতে টেকনিশিয়ানদের নেই কোন উচ্চতর ডিগ্রী, নেই ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান’। তবু তারা দেদারছে দিয়ে যাচ্ছে প্যাথলজি রিপোর্ট।
সাপ্তাহিক চিকিৎসক দিয়েও লক্ষ্মীপুরে বহু প্যাথলজিস্ট মালিক কোটিপতি হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরে জমি কিনে বিলাসবহুল বাড়ি গাড়িও করেছেন এইসব সাপ্তাহিক ডাক্তার দিয়ে। এক চিকিৎসক তো বলেই ফেললেন-‘কেন আপনারা সাপ্তাহিক চিকিৎসকের কাছে কেনো যান? সাপ্তাহিক চিকিৎসক সপ্তাহে একদিন আসে বাকি দিনগুলোতে রুগীর ভালো-মন্দ কে দেখে?’ সত্যিই তো এ প্রশ্নের জবাব কি?
হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজিতে কোন ডেলিভারি রোগী গেলে সিজার ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিকিৎসা তারা জানেনা বলে মনে হয়। যে সমস্ত চিকিৎসকরা লিপলেট টাঙ্গিয়ে সাতশ টাকা করে ভিজিট নিতেন, একমাসের মধ্যে পুনরায় চারশত টাকা করে হাতাতেন, তারা এই সময়ে কোথায় আছেন?
হাসপাতালে ভর্তির দরকার নেই তবুও ভর্তি করিয়ে রাখা, পরীক্ষার দরকার নেই তবুও পরীক্ষা করানো, ঔষুধের দরকার নেই তবুও সেবন করিয়ে টাকা কামাতেন যেসব চিকিৎসক, ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি তারা এসময় বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।
দেখা গেছে লক্ষীপুরের হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি রিপোর্ট জেলার বাহিরে গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া এসবের রিপোর্ট এক আসে না, ভুল ভ্রান্তিতে সয়লাব। অদক্ষ প্যাথলজিষ্ট দ্বারা রিপোর্ট প্রদান করার দরুন, চিকিৎসকের বেখেয়ালের দরুন বা কার্যত তাদের অজ্ঞতার দরুন এসব হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন এবং সেখানে লক্ষ্মীপুরের রিপোর্ট অগ্রহণযোগ্য হয়।
লক্ষ্মীপুরে বড় বড় ডিগ্রী ঝুলানো চিকিৎসকরা পালিয়ে গেছেন। যারা স্থানীয় তারা এদুর্যোগের ভেতরেও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য শুভকামনা এবং তাদের দায়ীত্ব-কর্তব্য দেখে শ্রদ্ধা জানাই।
তাহলে এসব রক্তচোষা চিকিৎসক হাসপাতাল ক্লিনিক প্যাথলজি পাতানোঅলাদের মুখে থুথু ছিটিয়ে তাদের যদি কোন বৈধ কাগজপত্র থাকে তা বাতিল করে এসব মুড়ি-মুড়কির দোকান ঝেটিয়ে ফেলা দরকার। দেশের দুর্যোগ মূহুর্তে, মানুষের বিপদের সময়ে যারা কাছে থাকবে না, পাশে থাকবে না তারা কিসের চিকিৎসাসেবা খুলে বসেছে
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জনকে অনুরোধ করবো- ক্রান্তিকালে যেসব চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে, যে চিকিৎসক বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করেছে চিকিৎসা সেবা থেকে বিরত রয়েছে তাদের তালিকা করে আইনি ব্যবস্থা নিন। গণমানুষের যদি কোন উপকারে না আসে তাহলে মিছামিছি রক্তচোষা কেন?
লেখক: কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
abirnewsroom@gmail.com
Leave a Reply