অর্থনীতির বরপুত্র প্রবাসীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন : সুজন

অর্থনীতির বরপুত্র খ্যাত প্রবাসীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি আজ শনিবার (৯ মে) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপরোক্ত আহবান জানান।

এ সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন এবং অচলাবস্থার কারণে নানাবিধ সংকটে পড়েছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা খ্যাত আমাদের সোনার সন্তান প্রবাসীরা। যারা একসময় আপনজনের এক চিলতে সুখ আর মুখ ভরা হাসি ফোটাতে নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে বিদেশ বিভুঁয়ে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে নিজের পরিবার ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রাণপন সংগ্রাম করতো তারাই আজ খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবে বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিদেশের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা এ অবস্থায় একদিকে বেতন পাচ্ছেন না অনেকে আবার ছাটাই কিংবা বেতন হ্রাসের কবলে পড়ছেন। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কনস্ট্রাকশন, শিল্পকারখানা, শপিং মল, সুপারশপ, রেস্টুরেন্টসহ, নানাবিধ ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক প্রবাসী। অসীম মমতা আর বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে দেশের পতাকা বুকে ধারন করা এক একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা বছরের পর বছর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাথরে ফুল ফোটাতো তারাই এখন দেশে বিদেশে উভয় সংকটে আছেন। একদিকে কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন অন্যদিকে দেশে থাকা প্রিয়জনদের অর্থনৈতিক কষ্ট, যার কারণে বিভিন্ন দেশে অনেক প্রবাসী স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করেছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত দূতাবাসগুলোও প্রবাসীদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত থাকা এসব দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের দিকে নজরও রাখছেনা বলেও অভিযোগ করছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা। এমন পরিস্থিতিতে দূতাবাসগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার প্রধানের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রবাসীদের নিরাপত্তাসহ মানবেতর সমস্যা তথা খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়া ঘর ভাড়া না দেওয়ার কারণে প্রবাসীদের বাসার বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দেশ থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করা এসব প্রবাসীদের বাস্তব অবস্থা সিনেমার করুন কাহিনীকেও হারা মানায়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে প্রবাসীদের মাঝে আরো ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সর্বাগ্রে আমাদের দেশের অর্থনীতির বরপুত্র প্রবাসীদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ স্কীম গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নিকট বিনীত অনুরোধ জানান তিনি।

সাথে সাথে দেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের পরিবার পরিজনদেরও থোক অনুদান বরাদ্ধ করার জন্য সরকারের নিকট বিনীত আবেদন জানান সুজন।

তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের এসব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানকল্পে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির আতুর ঘর। বাংলাদেশের অর্থনীতির সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এই বন্দরের মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক মহামারী সৃষ্টিকারী এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায় আমরাও উৎকন্ঠিত। আমরা ইতিপূর্বে নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে বার বার বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অনুরোধ জানিয়েছি বন্দরের অভ্যন্তরে অপারেশনাল এবং দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিএন্ডএফ স্টাফ, শিপিং এজেন্ট স্টাফ, বার্থ অপারেটর স্টাফ ও শ্রমিক, ডক শ্রমিক, ল্যাসিং আনল্যাসিং শ্রমিক, ক্রেন অপারেটর, মার্চেন্ট শ্রমিক, শিপ হ্যান্ডলিং, মেরিন কন্ট্রাকটর শ্রমিকসহ প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করা হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। স্বল্প সংখ্যক শ্রমিকগণ কিছুটা স্বাস্থ্য সচেতন থাকলেও বিপুল সংখ্যক শ্রমিকরা মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা শ্রমিক-কর্মচারীরা নিজেরাই মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে পতিত হচ্ছে।

ফলতঃ বন্দরের অভ্যন্তরে যারা কাজ করছে তারা নানাবিধ উৎকন্ঠা মাথায় নিয়ে জীবিকার তাগিদে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। এছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়ান স্টপে কর্মরত একজন কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত এই শাখায় একসাথে অনেক কর্মচারী কাজ করেন। বন্দর থেকে পণ্য খালাসের ছাড়পত্র, বিল পরিশোধসহ যাবতীয় কাজ করা হয় এই শাখায়। এই শাখায় পণ্য খালাসে যুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা সেবা গ্রহীতাদের ভিড় সবসময় লেগে থাকে। এতে করে সবার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের আমদানি রপ্তানির প্রধানতম প্রতিষ্টান চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা তাই একান্ত প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা প্রদান করলেও কার্যত তাদের সে ঘোষণা মাঠ পর্যায়ে কার্যকর নয়। তবে বর্তমান এ পরিস্থিতিতেও ছুটির দিনগুলোতেও দেশের আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক এবং ভোগ্য পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমরা জানি চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনৈতিকভাবে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্টান। এ বন্দরের কাছে চট্টগ্রামবাসীর অনেক চাওয়া পাওয়া রয়েছে। আমরা আশা করবো চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্টান হিসেবে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, আমরা আরো কামনা করি চট্টগ্রাম বন্দর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষার পাশাপশি চট্টগ্রামবাসীকেও সুরক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে জনগনের এ দুর্যোগে মানুষের পাশে দাড়ানোর।

তিনি করোনাভাইরাস থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নগরবাসীর মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ করার আহবান জানান।

এছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত হাসপাতালে আইসুলেশন ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানান।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *