জামদানী শাড়ির আদীকথা (১) ইতিহাস ও বংশপরম্পরার আভিজাত্যের প্রতীক!

জামদানী শাড়ির আদীকথা

২৪ ঘণ্টা সংস্কৃতি। জী আমি বাংলার, শুধুই যে বাংলার।।

লেখিকা তানজিন তিপিয়া : জামদানী, আমার পারিবারের আভিজাত্যের প্রতীক, আমাদের দেশীয় গর্বের প্রতীক। অক্লান্ত দীর্ঘ পরিশ্রমের অপর নাম এবং এই বাংলায় জন্মানো এক প্রাচীন নাম জামদানী। ফার্সিশব্দ হতে আগত দু’টো ধ্বনির পরিপাটি মিশ্রণ।

জাম মানে ফুল আর দানী মানে পাত্র মোট কথা ফুলদানি। আরো এক ভাবে বলা যায়, জাম মানে জামা আর দানী মানে দানা অর্থাৎ বুটিদার জামা।এটি সব সময়ে বাংলারই ছিল সেই ১৪ শতাব্দী থেকেই।

অনেক বেশি বিস্তার লাভ করে মোঘল সাম্রাজ্যের আমলে।সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) রাজত্বকে জামদানীর স্বর্ণযুগ বলে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না, মোঘল শাসনামলে এর ঐতিহাসিক উৎপাদনের কারণে। যা শুধু মাত্র রাজপরিবারের সদস্যরা এবং রাজ্যে অন্তর্গত অভিজাত ব্যক্তিবর্গরাই পরতে পারতেন, কারণ তখন থেকেই সময় সাপেক্ষ হাতের তৈরি এই কাপড়টি বেশ ব্যয় বহুল ছিলো।

মসলিন, কার্পাস তুলোয় বোনা একটি সুতিকাপড়। এটি ইরাকের মোসুল শহর হতে আগত সেখানেই প্রথম উৎপত্তি। নামেই শহরটির আভাস পাওয়া যায়।সম্রাট জাহাঙ্গীরের আলমে (১৬০৫-১৬২৭) এইবস্ত্রে তৃতীয় সুতোর মাধ্যমে ফুলবোনা আরম্ভ হয়।

জামদানী শাড়ির বাকি ইতিহাস পড়তে চোখ রাখুন ২৪ ঘণ্টা ডট নিউজে। ৪ পর্বের আদিকথার দ্বিতীয় খণ্ডে থাকছে আরো চমকপ্রদ কিছু ইতিহাস।

জাহাঙ্গীরকে জামদানী পরতেও দেখা গিয়েছে উনার কোমরে যে কাপড়টি জড়ানো হতো ওটা নানা ফুলে ঘন কাজের জামদানী। এ ব্যাপারে স্কটিশ লেখক “জন ফোর্বস ওয়াটসন “১৮৬৬ সনে উনার বইতে মসলিন কাপড়ে আকর্ষণীয় নকশার কথা, ঢাকার তাঁতবুনন পদ্ধতি ও দামি পণ্য বলে উল্লেখ করেছেন। আর এই কারণেই জামদানীর সাথে“আভিজাত্য” শব্দটি যুক্ত হয়ে রবে আজীবন।

সাধারণত তুলা এবং সোনার সুতোর মিশ্রণে বোনা হতো তখন। সম্ভবত ২০০০ হাজার বছর আগের পদ্ধতি যা আজো বিদ্যমান। ২০১৩ সালে জামদানী বুননের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে তুলে ধরে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্তর্গত “ইনটেনজিবল কালচার হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি” তে নিবন্ধন করে। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ জামদানী শাড়ির জন্য ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে মর্যাদা পায়।

মসলিনের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় “পেরিপ্লাস অফ দি এরিথ্রেয়ান সি” বইয়ে এবং আরব, চীন এবং ইতালিয়ান ভ্রমণকারী ব্যবসায়ীদের বিবরণে।

জামদানী হস্তচালিত বোনা কার্পাসতুলা দ্বারা তৈরি, যা ঐতিহাসিকভাবে মসলিন হিসেবে পরিচিত ছিল। জামদানী বুননের ঐতিহ্য বাঙালি বংশভুত। তাঁতের বুননের সর্বাধিক সময় এবং শ্রম-নিবিড় রূপগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি মসলিনের অন্যতম সেরা জাত।

বাংলাদেশী তাঁতের অন্যতম শৈল্পিক বস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। ঐতিহ্যগত ভাবে ঢাকার সোনারগাঁও, রূপসী নারায়গঞ্জ সেই মোঘল কাল থেকেই জামদানীর জন্য প্রসিদ্ধ স্থান যা আজো অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে যেন বলছে- জী আমি বাংলার, শুধুই যে বাংলার।

মানুষ পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পান অর্থ, সম্পদ, জায়গা, জমি আর আমি এগুলোর সাথে করেই পেয়েছি জামদানী। নিঃসন্দেহে এটি বংশ পরম্পরায় আমার পারিবারিক বস্ত্র, দৌলত বংশের প্রতীক।

২৪ ঘণ্টা/লেখিকা-তানজিন তিপিয়া/ সম্পাদনা-রাজীব প্রিন্স

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *