ভিক্ষার চাল বিক্রি করে ত্রাণ পেতে ইউপি সদস্যকে ঘুষ

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ:প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেবার কথা বলে বরগুনায় এক ভিখারির কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ঘুষ নিয়েও ‌প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা দেননি বলে অভিযোগ করেছেন ষাটোর্ধ ভিখারি।

বরগুনার উরবুনিয়া গ্রামের কহিনুর বেগম। ষাটোর্ধ বয়স তাঁর। নিঃসন্তান তার উপরে বিধবা। ভিক্ষে করেই কোনমতে চলে তাঁর জীবন। এমন অসহায় বৃদ্ধা কহিনুর বেগমকেও ভিক্ষার চাল বিক্রি করে নগদ ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য।

আর এ টাকা নিয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর এমবালিয়াতলী ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শামীম গাজী।

কহিনুর বেগমের বাড়ি উরবুনিয়া গ্রামে গিয়ে তাঁর ঘরের অবস্থা দেখে বোঝা গেছে দরিদ্র সীমার কতটা নীচে বসবাস করেন তিনি। ভাঙ্গা-চোরা টিনের জোড়াতালির কোনরকম একটি খুপরিতে একাই থাকেন হতদরিদ্র অসহায় বৃদ্ধা কহিনুর বেগম। স্বামী রুস্তুম আলীর মৃত্যু হয়েছে আরও বছর তিনেক আগে।

কহিনুর বেগম বলেন, ২০ বছর ধরে ভিক্ষা করে নিজের খাবার জোগাড় করছি। বাড়িতে ভাঙ্গা একটি ঘরে বসবাস করছি। করোনার কারণে কেউ ভিক্ষা দিতে চাচ্ছে না।

কহিনুর বেগম আরও বলেন, হুনছি প্রধানমন্ত্রী গরীবরে রেশন কার্ড দেবে। রেশন কার্ডে চাউল আর খাবার পামু। মেম্বারের বাড়ি গেলে মেম্বার শামীম গাজী ও তার বাবা কাদের গাজী রেশন কার্ডের জন্য ২ হাজার টাকা লাগবে কয়। দুদিন পর ঘরে রাখা ভিক্ষার চাউল বিক্রি করে মেম্বারের হাতে তার বাবার সামনে ২ হাজার টাকা দেই।

তিনি বলেন,এহন আর মেম্বাররে বাড়ি পাইনা। এহন হুনি রেশন কার্ডের জন্য স্যার টাকা লাগে না। আমার টাহাও গেল, চাউলও গেল, গরীব মানুষ এহন খামুকি স্যার।

সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগী আরও একাধিক দরিদ্র অসহায় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু কহিনুর বেগম নয় একই এলাকার আরও অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়েছেন ইউপি সদস্য শামীমগাজী ও তার পিতা আ. কাদের গাজী।

একই গ্রামের ড্রেজার শ্রমিক আ. সালাম, দিনমজুর বশির আকন, হেলালমিয়া, এবং সেলিনাসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে তারাও একই অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য শামীম গাজীর মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাবুগঞ্জ পুলিশ ফাড়ির ওসি রনজিৎ সরকার বলেন, এ বিষয়ে তাকে কেউ কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তবে এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান জানিয়েছেন, হতদরিদ্র কহিনুর বেগমের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তাছাড়া গত সোমবার তাঁর কাছে একই এলাকার আব্দুল সালাম নামের একজন ভুক্তভোগী ওই ইউপি সদস্য মো. শামীম গাজী এবং তার পিতা আ. কাদের গাজীর বিরুদ্ধে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই অভিযোগে তিনি আরও অনেকের নাম উল্লেখ করেছেন যাদের কাছ থেকেও ওই ইউপি সদস্য ও তার পিতা আ. কাদের গাজী ৫০০ করে টাকা তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান।

২৪ ঘন্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *