২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ:বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তীর হাতে সবসময় পরিহিত থাকা এক সামান্য ব্রেসলেটকে অসামান্য করে তুলেছে। রূপার এই ব্রেসলেটের ওজনটা বুঝা গেল আজ নিলামে। মাশরাফীর ১৮ বছরের এই সঙ্গীকে ৪২ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন লেইজিং অ্যান্ড ফিনেন্স কোম্পানিস অ্যাসোসিয়েশন-বিএলএফসিএ।
রোববার (১৬ মে) দিনগত রাত পৌনে একটায় শেষ হয় নিলামটি। ফেইসবুকে ‘Auction 4 Action’ পেইজ-এ নিলামে ব্রেসলেটটির ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ৫ লাখ টাকা। নিলামে তুমুল আগ্রহ ও লড়াই শেষে এটি কিনে নেয় বিএলএফসিএ।
এই অর্থ দিয়ে মাশরাফীর ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষদের।
তবে নিলামে বিক্রি হলেও ব্রেসলেট থাকবে মাশরাফির হাতেই।
বন্ধুর মামাকে দিয়ে নিজের নাম খচিত এই ব্রেসলেট বানিয়েছিলেন মাশরাফি।
বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মমিন উল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্রেসলেটটি তারা উপহার হিসেবে মাশরাফীকেই ফিরিয়ে দিতে চান।
লাইভে মমিন উল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ব্রেসলেটটি তারা কি করবেন? জবাবে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি উপহার হিসেবে মাশরাফীকেই দিতে চাই। তার হাতেই এটি সবচেয়ে বেশি শোভা পায়।
ব্রেসলেটটি মাশরাফীর হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেয়ার জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানান তিনি। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য মাশরাফীকে অনুরোধ করেন।
সম্মতি জানিয়ে মাশরাফী বলেন, আপনারা যদি ব্রেসলেটটি নিজেদের কাছে রাখেন তাতেও আমি কষ্ট পেতাম না। আপনাদের হাত থেকে পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটা আর পরবো না।
নিজের নাম খচিত এই ব্রেসলেট দীর্ঘ ১৮ বছর ব্যবহার করেছেন মাশরাফি। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন জড়িয়ে আছে এই স্মারকটিতে। শনিবার (১৬ মে) নিলাম শুরু হলেও নিলামের বিডের তথ্য প্রথমবার প্রকাশ করা হয় রবিবার (১৭ মে) সন্ধ্যার দিকে। ৬টা ১০ এর হালনাগাদ অনুযায়ী, নিলামের দর হাঁকানো হয় ৭ লাখ ৫০ হাজার বা সাড়ে ৭ লাখ টাকা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জানানো হয়, ব্রেসলেটের জন্য ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য হাঁকানো হয়েছে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিড দেখানো হয় ১১ লাখ টাকা। রাত নয়টায় ব্রেসলেটের বিড ১২ লাখ টাকা জানানো হয়।
রাত পৌনে বারোটার দিকে মাশরাফিকে নিয়ে আয়োজকরা ফেসবুক লাইভ শুরু করেন। এরপর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম। মাশরাফির ব্রেসলেট বিক্রির টাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সংকটে পড়া মানুষের সহায়তার কাজে ব্যয় করা হবে।
প্রিয় ব্রেসলেটের অজানা গল্প জানালেন মাশরাফি:
নিলামের সরাসরি সম্প্রচারিত পর্বে তিনি বলেন, ‘আমি যখন অনেক ছোট, বড়দের দেখতাম বিভিন্ন ধরনের ব্রেসলেট পরতেন। দুইটা জিনিসের প্রতি ছোটবেলা আমার অনেক শখ ছিল- ব্রেসলেট ও সানগ্লাস। কিন্তু বাবা-মায়ের ভয়ে, বিশেষ করে বাবার ভয়ে কখনো পরতাম না।’
২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির যাত্রা শুরু হয়। এরপর ভাবলেন- একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে নিশ্চয়ই বাবা-মা ব্রেসলেট পরার যখন বকা দেবেন না! তখন হাতে ব্রেসলেট পরা শুরু করেন। যদিও পছন্দসই ব্রেসলেট পেতে সময় লেগেছে।
মাশরাফি বলেন, ‘একটি ব্রেসলেট পরা শুরু করি। কিন্তু ডাইভ দিলে সেটা হাত থেকে পড়ে যায়। পরে অবশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম, তবে বেশিদিন টেকেনি। আমার এক বন্ধুকে বললাম ব্রেসলেট- আমাকে একটা তৈরি করে দে। সবাই যেরকম মূল্যবান ভাবছে ওরকম কিছু কিন্তু এটা না, অনেকে রুপার ভাবছে- সেটাও না। এটা অতি সাধারণ, স্টিলের তৈরি। আমার বন্ধুর মামার কাছ থেকে বানিয়ে নিয়েছি। এরপর থেকে পরি।’
দীর্ঘ ১৮ বছরে মাশরাফি কয়েকবার খুলেছেন এই ব্রেসলেট। তবে ব্রেসলেটটি হাতে থাকলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। ক্যারিয়ারজুড়ে সবসময় সব অবস্থায়ই তাকে এই ব্রেসলেট হাতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকবার হাত থেকে খুলে রেখেছি। তবে এটা ছাড়া কখনো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি। এরপর থেকে এটাই আমার সঙ্গী। ভালোমন্দ সবকিছুর সাথেই এটা জড়িয়ে আছে। এটা ছাড়া আর কিছু ব্যবহারের চেষ্টা করিনি। শুধু অপারেশন থিয়েটারে স্টিলের কিছু রাখার অনুমতি করে না, কিংবা এমআরআই করতে গেলে। এই দুই সময় ছাড়া সাধারণত এটা খুলিনি। অবশ্য এই দুই জায়গায় অনেক বেশি গিয়েছি (হাসি)। তাছাড়া এটা সবসময় আমার সাথে ছিল ও আছে।’
আইপিডিসি ফিন্যান্সের চমৎকার সিদ্ধান্তে নিলাম শেষেও ব্রেসলেটটি মাশরাফির কাছেই থাকছে!
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply