প্রশাসন ঠেকাতে নিজের বাসায় এনে চেয়ারম্যানই বাল্যবিয়ে পড়ালেন

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর:প্রশাসন ও সাংবাদিক ঠেকাতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজের বাসায় এনে বাল্যবিবাহ পড়ালেন।

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী মিয়ার বাড়িতে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে চর মার্টিন ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী মিয়ার বাসায় ৯ম শ্রেণির ছাত্র মো. আল আমিনের (১৫) ও একই শ্রেণির ছাত্রী নাছরিন আক্তারের (১৪) সাত লাখ টাকা দেনমোহরে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মে) দুপুরে বলিরপুল বাজার সংলগ্ন চেয়ারম্যানের নিজ বাসায় এ বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়।

নাছরিন আক্তার উপজেলার চর শামছুদ্দিন জাহেরিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ও চর মার্টিন ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের মেয়ে। বর মো. আল আমিন একই মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ও পাশ্ববর্তী চর কালকিনি ইউনিয়নের হাজী রুহুল আমিনের ছেলে।

ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরিদ উদ্দিন সাত্তার বলেন, আল আমিন ও নাসরিন তার মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, আল আমিন ২০১৯ সালের জেডিসির ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ৯ম শ্রেণীর মো, আল আমিনের সঙ্গে এক শ্রেণির ছাত্রী নাছরিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঈদের দিন (২৬ মে) তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাদেরকে স্বজনরা উদ্ধার করে চেয়ারম্যানকে জানায়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে চেয়ারম্যান ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে নিজে উপস্থিত থেকে এ বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী মিয়া বলেন, বর কনে উভয়পক্ষের লোকজন আমার কাছে আসে। জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখে বয়স ঠিক থাকায় ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে উভয়পক্ষের সম্মতিতে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

চরমার্টিন ইউনিয়নের নিকা রেজিস্ট্রার কাজী মাকসুদুর রহমানের কাছে বিয়ে ও জন্মসনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। জন্মসনদও দেখাতে পারেননি।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, আমাকে বিষয়টি কেউ জানায়নি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বাল্যবিয়ের অপরাধে বর-কনেসহ সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী মিয়া আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় সময় আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করা, ইউনিয়নে অবাধে বালু উত্তোলন জন্মনিবন্ধন বিতরণে টাকা নেয়া ও টাকা দিয়ে বয়স কমানো বাড়ানো সহ বিদ্যুৎ দেয়ার নামে টাকা উত্তোলন করেন। এই নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও এই চেয়ারম্যানের অবৈধ কর্মকান্ড বহাল তবিয়তেই চলে।

উল্লেখ্য এই ইউসুফ আলী মিয়া ভোট কারচুপির মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরেই সালিশে এক কিশোরীসহ দুজনকে পেটানোর অভিযোগে মামলা হলে জেল খেটে জামিনে আসে।

২৪ ঘণ্টা/এম আর/আকাশ

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *