এসএম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী:জীবন আছে বলেই জীবিকা নিয়ে এতো টানাটানি। এতো সব প্রশ্ন। মধ্য এশিয়া থেকে একদল লোক উপমহাদেশে এসেই বর্ণবৈষম্যের রাজনীতি শুরু করে দিলো।
সিন্ধু অঞ্চলে পূর্ব হতে বসবাসকারী হিন্দুস্তানীদেরকে ওরা বললো, তোরা আজ থেকে অনার্য আর আমরা আর্য। শুধু আর্যই না। আমরা কেউ ব্রাহ্মণ—অর্থাৎ নেতা গোছের, কেবল ঘরে বসে গিলবো আর ঈশ্বর আরাধনা ও দেশ পরিচালনা করবো; কেউবা ক্ষত্রিয়—কেবল ব্যারাকে থাকবো; আর কেউবা বৈশ্য— কেবল ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকবো!
তখন অবশ্য মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস্, স্যানিটাইজার ইত্যাদির ব্যবসা এতো জমজমাট ছিলো না।
কিন্তু জগৎশেঠ ও আজকের দরবেশের মতো সরকারি-দরকারী- তরকারী ব্যবসায়ী তখনও ছিলো।
এদিকে জীবিকার প্রশ্নে মাঠে-ঘাটে কাজ করতো শূদ্র বর্ণের লোক। এক কথায় কাজের লোক! ক্রীতদাস, কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক–চতুর্থ শ্রেণির মনুষ্য প্রাণী।
তৎকালীন বর্ণ বৈষম্যের ধর্মীয় রাজনীতির নেতা হিসেবে ঠ্যাংগের উপর ঠ্যাং দিয়ে ব্রাহ্মণ গোছের নেতারা অভূক্ত ব্যক্তিগুলোকে কৌশলে জীবিকার দিকে লেলিয়ে দিতো—-বাঘ, সাপের ডর কে জয় করে, যুদ্ধ করে অবচেতন মনে শূদ্ররা বাঁচার লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে কালের পর কাল!
মহাকাল পেরিয়ে, সেই মধ্য এশিয়ার নিকট স্থান চীন থেকে করোনা নামক এক ভাইরাস এলো। কলিকাল পেরিয়ে করোনাকালে পা দিলাম আমরা। ফলে দ্রুত কোভিড-ননকোভিড বিভাজনের শিকার হই।
কোভিডের ঠেলায় ঠাওর করতে পারছি না আমরা কোন জাতের ননকোভিড—-আক্রান্ত, শনাক্ত, উপসর্গ বহনকারী নাকি টেস্টের রেজাল্ট ঝুলে থাকা নিঃসঙ্গ প্রাণী?
এমতাবস্থায়, জীবিকার প্রশ্নে যখন অপরিকল্পিতভাবে কেবল প্রজ্ঞাপন দিয়ে জীবন যুদ্ধে আমাদেরকে লেলিয়ে দেয়া হয় তখন বুঝার বাকী রইলো না—আমরা ননকোভিড শূদ্র শ্রেণির কাজের লোক!
আমরা কেবল ঘামঝরা পরিশ্রম করে নিজে নিজের পেট পুরবো আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে উচ্চবর্গীয় রাজকর্মচারীর বেতন-ভাতার জন্য বহুরূপী ট্যাক্স দিবো! অর্থনীতির চাকা তখন ঘুরতেই থাকিবে। আহা!
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে হবে গণজনের কল্যাণে। স্থিতিশীল, দূরদর্শী, পরিকল্পনামাফিক! এমনিতেই পকেটে টাকা নেই। অথচ ভাড়া বাড়ালেন দ্বিগুণ। রাঙা ভাবী সিনেমা দেখেছি।
এবার দেখছি পরিবহন মালিক রাঙা ভাইয়ের খেলা। সব জেলার সবকিছু একবারে না খুলে ধীরে ধীরে খোলা যেত! চিড়িয়াখানার সব গেইট খুলে দিয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত দেখবেন কোন দর্শক পশুর আক্রমণের শিকার হয় কিনা?
অথচ আড়াই মাস ছিলো। আমরা পরিকল্পনা করতে পারতাম। দেশকে কোভিড-নন কোভিড মানচিত্রে বিভাগ করে লাল, কমলা, নীল ও সবুজ অঞ্চলে ভাগ করে জীবিকার প্রশ্নে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সবুজ সংকেত দিতে পারতাম! অথচ আমরা কী করলাম?
জীবন বাঁচাতে জীবিকা লাগবেই! এর সমন্বয়ের জন্যই তো গণজন রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব দেয়! ওরা চায় সমন্বয়, পরিকল্পনা ও সঠিক সিদ্ধান্ত!
গণজন অবুঝ অসচেতন বলেই জীবন ও জীবিকার মধ্যস্থতাকারী রাজনীতিকদের কাছ থেকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করে। তাই জনগণের এই চাওয়াটাকে গুরুচন্ডালী দোষ বলে চালিয়ে দেয়া যায় না।
বরং রাষ্ট্রের জরুরি বিভাগে নিয়োজিত রাজনৈতিক কর্মীদেরকে কোন প্রটোকল ছাড়াই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনকাতারে দাড়ানোর বিনীত অনুরোধ করছি। তখন হয়তো এই কাজের লোকগুলো ভরসা পাবে!
পরিশেষে বলি, আমরা যা আশঙ্কা করছি তা যেনো ভুল প্রমাণিত হয়! (ঠিলো)
লেখক: আইনজীবী ও বিশ্লেষক
Leave a Reply