২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। চট্টগ্রাম ডেস্ক : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন দেশের অর্থনৈতিক বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত চট্টগ্রামের ২টি ইপিজেড এখন করোনা সংক্রমণ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিকের প্রাণ।
এসব ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণ রক্ষার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে নিজ উদ্দ্যেগে সিইপিজেড এবং কেইপিজেড এর মহাব্যবস্থাপকদ্বয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ টেলিফোনে আলোচনা করেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন।
এসময় ইপিজেডসমূহে আইসোলেশন সেন্টার এবং করোনা পরীক্ষাগার চালু করতে তিনি মহাব্যবস্থাপকদ্বয়ের কাছে বিনীত আহ্বান জানান। মঙ্গলবার বিকেলে খোরশেদ আলমের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে অর্থনৈতিক আঘাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বাঁচাতে সর্বপ্রথম গার্মেন্টস সেক্টরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী এ সিদ্ধান্তে দেশের রপ্তানিমূখী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট মালিক এবং শ্রমিকসহ সকলের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। পরবর্তীতে সরকার দেশের রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ইপিজেডসমূহ চালু করার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
অত্যন্ত গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বেশীরভাগ প্রতিষ্টানেই স্বাস্থ্য বিধি না মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্বও পুরোপুরি উপেক্ষিত হচ্ছে প্রতিষ্টানসমূহে।
এতে করে দেশের অর্থনৈতিক বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত ইপিজেডসমূহে করোনা সংক্রমণ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া কোন প্রতিষ্টানের কর্মী অসুস্থ হলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে বাড়ীতে অবস্থানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
অথচ একজন গার্মেন্টস কর্মী যে পরিবেশে দিনাতিপাত করে সে পরিবেশে এ পরিস্থিতিতে বাড়ীতে অবস্থান করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তারপরও তাঁকে নিরূপায় হয়ে প্রতিষ্টানের নির্দেশনা মেনে বাড়ীতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
ফলত দেখা যাচ্ছে যে ঐ গার্মেন্টস কর্মীর পরিবারসহ এলাকাবাসীরও সংক্রমিত হওয়ার আশংকা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকাসমূহ যেমন ৩৭,৩৮,৩৯,৪০ এবং ৪১নং ওয়ার্ডের প্রায় বাসা বাড়ীতে জ্বর, সর্দি, কাঁশিসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এতে করে ঐ সকল এলাকার অধিবাসীদের মাঝেও উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন সরকার প্রণোদনার একটি বিরাট অংশ গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ব্যয় করছে অথচ করোনা পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধানতম খাত গার্মেন্টস শিল্পের মালিকদের রহস্যজনক নীরবতা আমাদেরকে হতবাক করছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্টান নানারকম সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেও গার্মেন্টস মালিকরা কোন প্রকার সামাজিক দায়িত্ব পালন করেনাই। উপরন্তু যে শ্রমিকদের রক্ত, ঘামে তাদের এতো বিত্ত বৈভব, প্রতিপত্তি সে সকল শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের এরকম নিষ্টুরতা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে প্রতিনিয়ত।
তিনি অবিলম্বে গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশন সেন্টার এবং করোনা পরীক্ষাগার চালু করার উদাত্ত আহবান জানান।এছাড়া কোন গার্মেন্টস কর্মী আইসোলেশন থাকা অবস্থায় কোম্পানী প্রদত্ত বেতন ভাতা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য সিইপিজেড এবং কেইপিজেড এর মহাব্যবস্থাপকদ্বয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
তিনি কেইপিজেডে অবস্থিত নারী উন্নয়ন কেন্দ্রটি আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করা যেতে পারে বলেও মত প্রকাশ করেন এবং মহাব্যবস্থাপকদ্বয়কে উপরোক্ত বিষয়ে দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান সুজন।
তিনি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন যদি কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে উপরোক্ত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে দেশের বৃহত্তম রপ্তানি কেন্দ্র সচল এবং নিরাপদ রাখার স্বার্থে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে ইপিজেডসমূহে অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন।
সিইপিজেড এর মহাব্যবস্থাপক মোঃ খুরশিদ আলম এবং কেইপিজেড এর মহাব্যবস্থাপক মসিউদ্দিন বিন মেজবাহ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সুজনের প্রস্তাবনার সাথে সহমত পোষন করেন। তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনার জন্য সুজনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মহাব্যবস্থাপকগণ নিজেরাও এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে সক্ষম হন এবং দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম গার্মেন্টস খাতকে নিরাপদ রাখতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশন সেন্টার চালুর উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
মহাব্যবস্থাপকদ্বয় সুজনের উত্থাপিত প্রস্তাবনাসমূহ লিখিত আকারে বেপজা কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
২৪ ঘণ্টা/রাজীব সেন প্রিন্স
Leave a Reply