বর্ষীয়ান পাহাড়ি নেতা সুধাসিন্ধু খীসা পরলোকে

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:পাহাড়ের বর্ষীয়ান রাজনীতিক-ষাটের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী মেধাবী ছাত্রনেতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সুধাসিন্ধু খীসা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে খাগড়াছড়িস্থ বাসভবনে পরলোক গমন করেছেন।

তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক অসঙ্গতি নিয়ে নিজ বাসায় শয্যাশায়ী ছিলেন। পার্বত্য জেলার পাহাড়ি জনগণের কাছে তিনি একজন সুবক্তা ও শিক্ষা-দীক্ষায় উঁচু মানের নেতা হিশেবে অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর মৃত্যুতে তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের মাঝে একটি শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

সত্তরোর্ধ্ব এই নেতা মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

আজ (বুধবার) দুপুরে তাঁকে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়িস্থ তাঁর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক শ্মশানে সৎকার করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র থাকাকালে তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের রাজনীতি’র নেতৃস্থানীয় একজন হয়ে উঠেন। প্রয়াত সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম. এন. লারমা)-র সাথে মিলে গঠন করেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)’। যেটি সশস্ত্র তৎপরতার কারণে সত্তর দশক থেকেই ‘শান্তি বাহিনী’ নামে পরিচিত।

তিনি এই দুই সংগঠনেই এম. এন. লারমা’র প্রতিনিধিত্বশীল চার বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাদের অন্যতম ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি)’ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটির সাথে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সংলাপেই সুধাসিন্ধু খীসা অত্যন্ত গুরুত্বপর্ন অবদান রেখেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

তিনি নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনেও লড়েছিলেন।

তাঁর রাজনৈতিক অনুসারী বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, প্রয়াত সুধাসিন্ধু খীসা ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সাদামাটা। তাঁর জাগতিক লোভ-লালসা ছিল না বললেই চলে। নিজের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার চেয়ে তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে ভীষণ এক শুন্যতা সৃষ্টি করেছে।

সুুধাসিন্ধু খীসা’র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ‘বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’-এর যুগ্ম-মহাসচিব সাংবাদিক কাজী মহসীন বলেন, বিএনপি-জামাত শাসনামলে (২০০১-২০০৬) সারাদেশের মতো খাগড়াছড়ির অবস্থাও ভীষণ বৈরি ছিল। সে সময়ে দৈনিক আজকের কাগজের জন্য একটি সিরিজ প্রতিবেদন করতে বেশ কয়েকবার সরেজমিনে খাগড়াছড়ি যাওয়া হয়েছে। যতোবারই গিয়েছি শ্রদ্ধেয় সুধাসিন্ধু খীসা’র বাসায় গিয়ে ওনার সাথে আড্ডা জমিয়েছি। তাঁর অসীম-সর্বজ্ঞ জ্ঞানের পরিধি দেখে মনে হয়েছে এই সময়ের অনেক জাতীয় রাজনৈতিক নেতার চেয়ে গরিমায় তিনি অনেক উর্ধ্বে।

এদিকে সুধাসিন্ধু খীসা’র মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাবেক এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ সা: সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, বাংলাদেশ মারমা উন্নয়ন সংসদ-এর সভাপতি মংপ্রু চৌধুরী ও সা: সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সা: সম্পাদক জুয়েল চাকমাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক জ্ঞাপন করেছেন।

২৪ ঘণ্টা/এম আর/প্রদীপ 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *