যশোরে মেস ভাড়া নিয়ে চাপা ক্ষোভ অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীর

নিলয় ধর,যশোর প্রতিনিধি:মেস ভাড়া নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে যশোরের অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীর। ভাড়ার ২৫ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছে তারা। দুর্দশাগ্রস্ত মালিকদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে হলেও পূর্বঘোষিত ৬০ শতাংশ মওকুফের দাবি তাদের। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্র নেতৃবৃন্দ।

এছাড়া, কিছু বাড়ির মালিক শিক্ষার্থীদের মেসভাড়ায় কোনো ছাড় দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে কোনো মালিক পুরোপুরি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশা দিয়েছেন মেস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

বুধবার মেস ভাড়া মওকুফ বিষয়ে সমাজত্রান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট,বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর ১টি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আজও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া মওকুফের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি,তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। করোনায় গভীর সঙ্কটে জীবনযাপন করছেন অভিভাকরা। এর মধ্যে টিউশনি না থাকায় আয়ের কোনো উৎস নেই শিক্ষার্থীদের। এই সঙ্কটের মধ্যে আম্পান ঝড় দরিদ্র মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পরিবার একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। তার মধ্যে মেসে না থেকেও ভাড়া টানা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু মালিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৪০ শতাংশ টাকা দিতে চায় শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে মালিকদের সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার দাবিও জানান তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, ৬০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সিদ্ধান্ত ৩০ জুনের মধ্যে কার্যকর করে তা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , গত (১৭ মার্চ) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর মেস ছেড়ে শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়ি চলে যায়। আবাসন সঙ্কট থাকায় যশোরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ৩ হাজার মেসে বা বাসায় অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভাড়া থেকে পড়াশোনা করে। মেসে না থেকেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোপুরি ভাড়া নেওয়ার জন্যে চাপ দেয় মালিকপক্ষ। এই নিয়ে যশোরের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর গত (৪ মে) জেলা প্রশাসন, মেস মালিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে মেস ভাড়ার ৬০ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্র প্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে এক পক্ষের স্বার্থে মেস ভাড়ার শতকরা ২৫ ভাগ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি অবজ্ঞা করে এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে, কিছু বাড়ির মালিক শিক্ষার্থীদের মেসভাড়ায় কোনো ছাড় দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর দাবি, পালবাড়ীর বাসা মালিক মোহাম্মদ রাজু এপ্রিল মাসে ২ রুমের ভাড়াবাবদ তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা,বিদ্যুৎ ও পানির বিলসহ মোট প্রায় ৭ হাজার টাকা আদায় করেছে। অথচ, মার্চের মধ্যবর্তী সময় থেকে তারা নিজ গ্রামে রয়েছে।

এছাড়া ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, সরকারি এমএম কলেজ, সিটি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরোপুরি মেস ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। যদিও অধিকাংশ মেস মালিক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে অনেকে ভাড়া পুরোপুরি মওকুফও করেছেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পলাশ বিশ্বাস, জেলা সভাপতি কৌশিক রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অনুপম আইচ বলেন, শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়ার ২৫ শতাংশ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। শুধু মালিক নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথাও চিন্তা করতে হবে। বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীদের ৫০ বা ৬০ শতাংশ মেস ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি ২৫ শতাংশ মওকুফের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে তবে ছাত্র সংগঠন তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবে বলে জানান তারা।

এই বিষয়ে যশোর মেস মালিক সমিতির সভাপতি মফিজুর রহমান ডাবলু বলেছেন, যদি কোনো মালিক পুরোপুরি ভাড়া নেন তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভাড়া থেকে মালিকদের সংসার চলে। সর্বশেষ বৈঠকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে একজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষের স্বার্থে সবার উপস্থিতিতে মালিকরা সে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। ছাত্রপ্রতিনিধরা কেনো উপস্থিত ছিলেন না এ বিষয়ে তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে মেস মালিক সমিতি ভবিষ্যতে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বাবদ বৃত্তির ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে তিনি।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *