যশোরে তরুণীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে দুই দফায় ধর্ষণ

নিলয় ধর,যশোর প্রতিনিধি:ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল দুর্বৃত্ত একজোড়া তরুণ-তরুণীকে আটকে রেখে তাদের আত্মীয়ের কাছে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা দাবি করে। এই সময় তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করার অভিযোগও করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোতয়ালী থানায় ২টি মামলা হয়েছে।

পুলিশ দুই দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। গ্রেফতার ২ জনের ১ জন হলো, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া সৈয়দপাড়ার মৃত সৈয়দ আসাদুজ্জামানের ছেলে সৈয়দ করিমুজ্জামান ওরফে করিম। এই ব্যক্তি যশোর শহরের বকচর চৌধুরীপাড়ায় জনৈক ডাক্তার মাহবুবের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও বকচর চৌধুরী পাড়ার সৈয়দ আকরাম হোসেনের মেয়ে- জামাই। অন্যজন শহরের বকচর মসজিদপাড়ার আশরাফ হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন জুম্মান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ,যশোরের শার্শা উপজেলার ১টি গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিবি রোড এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন ২০ বছরের এক তরুণী। ধর্ষণের শিকার এই তরুণী বুধবার দিবাগত গভীর রাতে কোতয়ালী থানায় নয় দুর্বৃত্তের নামে এজাহার দিয়েছেন।

এজাহারে তিনি বলেছেন, শার্শার গোড়পাড়া উত্তরপাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে সবুজ (২০) তার পূর্ব পরিচিত।

গত (৯ জুন) মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় সবুজ যশোর এসে তার নাম্বারে ফোন দেন। সুবজ তাকে জানিয়েছেন, তিনি যশোর শহরে এসেছেন কিন্তু এখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা তার নেই। তাই তাকে যেকোনো ১টি বাসায় রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করে। তখন ওই তরুণী তার এক বান্ধবীর নানি শহরের বকচর চৌধুরীপাড়ার ডাক্তার মাহবুবের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সালমার বাসায় নিয়ে যান সবুজকে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সেখানে সন্ধ্যার দিকে সবুজকে রেখে তরুণী তার বাসায় ফেরার জন্য বাইরে বের হলে সৈয়দ করিমুজ্জামান ওরফে করিম ও তার সহযোগী জাকির হোসেন ওরফে জুম্মান, বকচরের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস, বকচর মসজিদপাড়ার মৃত আকরামের ছেলে রুবেল, আবু বক্কার সিদ্দিকীর ছেলে তাজুল, জাবেদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ, তোফাজ্জেলের ছেলে রাজিব, মৃত রবির ছেলে বকুল এবং রেজাউল ইসলামের ছেলে জাকির ঘিরে ধরে। ওই দুর্বৃত্তরা তাকে ও বন্ধু সবুজকে জোর করে সালমার ঘরে ঢুকিয়ে আটকে রাখে। দুর্বৃত্তরা নানা অজুহাতে তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সবুজকে মারপিট করে তারা।

এরই মধ্যে তরুণীর শরীরে হাত দেয় করিম ও জুম্মান। রাত দশটার পর সৈয়দ করিমুজ্জামান ওরফে করিম বন্ধু সবুজকে বাঁচাতে হলে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে হবে বলে প্রস্তাব দেয় তারা। রাজি না হওয়ায় দুর্বৃত্ত দল জোর করে তাদের দুইজনকে নগ্ন করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করে। তারা এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তরুণী ভয় পেয়ে গেলে করিম তাকে দুই দফা ধর্ষণ করে। আর আটকে রেখে দেয় সবুজকে।

তরুণী দাবি করছেন, বুধবার বিকেলে তিনি কৌশলে বাড়িটি থেকে পালিয়ে সবুজের ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে সবুজকে উদ্ধার ও সৈয়দ করিমুজ্জামান করিম এবং জুম্মানকে গ্রেফতার করে।

এদিকে,সবুজের ভাই থানায় যে এজাহার দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তার ভাই যশোর শহরের খড়কি এলাকার একটি ছাত্রাবাসে থেকে যশোর সিটি কলেজে লেখাপড়া করতো। যশোরের এক তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৯ জুন সবুজ শার্শা থেকে যশোর আসেন। লকডাউনের কারণে খড়কির ছাত্রাবাস ছেড়ে দেওয়ায় তিনি সেখানে না গিয়ে শহরে অবস্থান করছিলেন।

ওই সময় দুর্বৃত্তরা ‘ডিবি পুলিশ’পরিচয়ে তাকে অপহরণ করে। পরে তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতন করে। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য তার সঙ্গে (সবুজের ভাই) ফোনে যোগাযোগও করে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে পুলিশের সহায়তা নেন।

কোতয়ালী পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুর্বৃত্তদের মধ্যে সৈয়দ করিমুজ্জামান ওরফে করিম ও তার সহযোগী জাকির হোসেন ওরফে জুম্মানকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে যশোর কোতয়ালী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ওই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *