রাউজানে আইসোলেশন সেন্টার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করলেন সাংসদপুত্র ফারাজ করিম

নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান (চট্টগ্রাম):বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে বাংলাদেশে। সারাদেশের মতো রাউজানেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। চট্টগ্রাম জেলার সর্বশেষ উপজেলা হিসেবে রাউজানে করোনা অাক্রান্ত শনাক্ত হওয়ায় পর এ পর্যন্ত শতাধিক ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।

বাংলাদেশে প্রথম আক্রান্ত ধরা পড়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ। এরপর আর থেমে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সিভিল সার্জন কার্যালয় চট্টগ্রামের ১৭ জুনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭৬৩ জন। চট্টগ্রাম মহানগর সহ সবকটি উপজেলায় সমানতালে দিনের পর দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসা সেবায় বেহাল অবস্থা প্রতীয়মান। আই.সি.ইউ, ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর মিছিল দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে জনমনে। শুধু তাই নয়, ক্রিটিক্যাল ক্রাইসিসের রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে হন্য হয়ে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছে না। এই দায়িত্ব যেন কারো নয়। অনেকে মনে করছেন অভিভাবকহীন চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামের এই করুণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপজেলার দূরদূরান্তের অসহায় অসুস্থ মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা নিয়ে যখন দুর্দশাগ্রস্থ করোনাকালীন এই দুঃসময়ে রাউজানকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভাবলেন রাউজানের সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী।

করোনা ক্রান্তিলগ্নের শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। নিয়েছেন একের পর এক মানবিক উদ্যোগ।

তার প্রশংসনীয় বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ছিল রাউজানে কর্মহীন মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানগাড়ী করে বিনামূল্যে মাছ ও শাকসবজি সরবরাহ, পুরো রমজান মাসব্যাপী চট্টগ্রামের প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিন ২ হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সেহেরীর খাবার সরবরাহ।

এছাড়াও, হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাস্থ্য সামগ্রী। দায়িত্ব নিয়েছেন রাউজানে মৃত্যুবরণকারী করোনা রোগীদের দাফন ও অন্তষ্টিক্রিয়ার। সবকটি উদ্যোগই ছিল মহৎ। প্রশংসা কুড়িয়েছেন সর্বমহলে।

এতসব কিছু করার পরও থেমে যাননি তিনি। এবার নিয়েছেন এক নতুন উদ্যোগ। রাউজানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিপূর্ণ আইসোলেশন সেন্টার তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি রাউজানের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। যিনি ১০ টাকা দিতে পারবেন তাকেও আহবান করেছেন যিনি ১০,০০০ টাকা দিতে পারবেন তাকেও আহবান করেছেন।

প্রতিনিয়ত তিনি তার ফেসবুক পেইজে মানুষের কাছে টাকা, স্বাস্থ্য সামগ্রী, অক্সিজেন সিলিন্ডার, বেড ইত্যাদি চেয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি জানেন এতবড় কর্মযজ্ঞ কখনো একার পক্ষে সম্ভব না। আহবান করেছেন রাউজানের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। নিজের মাতৃভূমিতে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে আকুল আবেদন করে যাচ্ছেন। আশার আলো এটাই যে রাউজানের সর্বস্তরের মানুষ ও ডাক্তার, নার্স তাকে দারুণভাবে সাড়া দিয়েছেন। তার ফেসবুক ওয়ালে লক্ষ্য করলেই তা বুঝা যায়। একজন রাজমিস্ত্রি কমেন্ট করে তার একদিনের বেতনের টাকা আইসোলেশন সেন্টারের জন্য দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেছেন ফারাজ ভাই এ পর্যন্ত যে কয়টি উদ্যোগই নিয়েছেন সবকয়টিই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এই উদ্যোগও বাস্তবায়িত হবে। স্বাস্থ্যসেবা পাবে রাউজান সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার অনেক অসহায় রোগী। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যাবেনা অনেক প্রিয়জন। সেই প্রত্যাশা সকলের।

এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, “রাউজানের সাংসদ এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী ও তার জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সুলতানপুর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করার যাবতীয় কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য আমরা সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”

এই কার্যক্রমের অন্যতম সমন্বয়কারী রাউজান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, “সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা আগামী জুলাই মাসের শুরুতেই আমাদের আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। এজন্য আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।”

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *