ফোন করলে বাসায় গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হতো। বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়া এক দিন পরেই পরীক্ষার ফল দেওয়া হতো। এমন অভিযোগ উঠেছে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) বিরুদ্ধে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চল আজ মঙ্গলবার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার বাকি চারজন হলেন হুমায়ুন কবীর, তাঁর স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী এবং সাইদ চৌধুরী ও আলমান। এর মধ্যে হুমায়ুন ও তানজীনা একসময় জেকেজিতে কর্মরত ছিলেন। এখন তাঁরা নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ছাড়াই ফল দেন। বাকি দুজন এখনো জেকেজিতে কর্মরত আছেন।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, একজন ভুক্তভোগী তাঁদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। জানিয়েছিলেন তাঁর বাসায় গিয়ে নমুনা নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর এক দিনের মধ্যেই ফল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়নি। পরবর্তী সময়ে অন্য জায়গায় পরীক্ষা করে দেখেছেন তাঁর করোন শনাক্ত হয়েছে। এমন অভিযোগের পর তাঁরা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে হুমায়ুন কবীর ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেকেজির সিইওসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জেকেজি বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার–নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।
তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ বলেন, বিনা মূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও একপর্যায়ে জেকেজি অর্থের সংকুলান করতে পারছিল না। তখন তারা বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এ দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা।
মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তানজীনা বলেছেন, সংগ্রহীত নমুনা তাঁরা ফেলে দিতেন। এরপর নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্যাডে ফল লিখে তা মেইল করে পাঠিয়ে দিতেন।
ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী বলেন, আদর্শের সঙ্গে না মেলায় এক মাসে আগে তিনি জেকেজি ছেড়ে চলে এসেছেন। বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানিয়েছেন। এরপর আরিফুল হক চৌধুরী একদিন তাঁর হাসপাতালে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) এসে ঝামেলা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তিনি নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এখন তিনি তাঁর বাবার বাসায় অবস্থান করছেন।
আরিফুলের বিরুদ্ধে পরীক্ষা ছাড়াই করোনা শনাক্তের ফল দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যে দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাসা থেকে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, সে দুটি প্ল্যাটফর্মের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply