দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে: চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়িত কার্যক্রম নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ইউএনডিপি ও ইউকে এইডের সহায়তাপুষ্ট নগরীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প সব সময়েই নগরের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের পাশে থেকে কাজ করছে এবং করবে।

তিনি ধৈর্যশীলতার সহিত কোভিড-১৯ দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য এবং প্রত্যেককে মাস্ক পরিধান করে ও সঠিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন যে, এই প্রকল্পের আওতায় খুব শীঘ্রই আরো দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ন মানুষকে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

মেয়র বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিপর্যস্থ করে চলেছে। বাধ্যতামূলক ছুটির কারণে অর্থনীতির গতি নিম্নমুখী। স্বল্প আয়ের এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সঙ্গে যুক্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগস্থ। এসব চাকরির বড় অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে যুক্ত। বলা যায়, এ সব খাতের কর্মজীবী ও উদ্যোক্তা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্ধিত বেকারত্ব ও মৌলিক প্রয়োজন যথাযথ মেটাতে না পারার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে নতুন একটি ধারা যুক্ত করবে, যাদের ‘নব্য দরিদ্র’ হিসেবে অভিহিত করা যায়। কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে উপার্জন হারিয়ে তারা দারিদ্র সীমার নিচে চলে এসেছে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারকরা আর্থিক প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তার সমন্বয়ে একটি প্যাকেজ ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। কর্মসংস্থানবিহীন পুনরুদ্ধার গত এক দশকে অর্জিত আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে চরম ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মহারানো পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখ-পড়ার খরচ চালানো বড়ই কষ্টকর। এমনকি ঝরে পড়তে পারে অনেক শিক্ষার্থী। তাই কোভিড-১৯ দূর্যোগকালীন সময়ে ইউএনডিপি ইউকে-এইড এর সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্টি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আজ বুধবার দুপুরে চসিক সম্মেলন কক্ষে ইউএনডিপি ইউকে-এইড এর সহায়তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রান্তিক জনগোষ্টি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।

আজ প্রদত্ত প্রতিজনকে ৩ হাজার ৩ শত ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ২০২০ সালের দ্বিতীয় দফা অনুদান হিসেবে ৮২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩০০ টাকা ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত যাদের মধ্যে ৮৬৮ জন ছেলে এবং ২৫৩৬ জন মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ অনুদান বিতরণ করা হয়। এই অর্থ সহায়তা উপকারভোগীদের মোবাইল একাউন্টে পৌঁছে যাবে।

অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাউন ম্যানেজার মো. সারোয়ার হোসেন খান, সোসিও ইকোনমিক ও নিউট্রিশন এক্সপার্ট মোহাম্মদ হানিফ, টাউন ফেডারেশন এর চেয়ারপার্সন কোহিনুর আক্তারসহ এলআইইউপিসি প্রকল্পের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রান্তিকজনগোষ্টির জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ৮৪ হাজার পরিবারের মাঝে ৫ টি করে প্রায় ৪ লক্ষ ২৩ হাজার সাবান, ৩৬৪ সিডিসিতে ৩৮৪টি হাত ধোয়ার পয়েন্ট স্থাপন, কয়েকটি এতিমখানায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে দেয়া হয়েছে ৪৫ হাজার সাবান। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১ হাজার দিনের জরুরী পুষ্টি খাদ্য সহায়তায় ১ হাজার ৬শ ৭৪ জন গর্ভবর্তী মাকে মাসিক জরুরী খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
লকডাউন চলাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবীরা হলেন অবরুদ্ধ মানুষের কাছের স্বজ্জন-মেয়র
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন চলাকালীন সময়ে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীরা হলেন অবরুদ্ধ মানুষের কাছের স্বজ্জন ও ভালো বন্ধু। এ জন্য তাদের জানতে হবে, শিখতে হবে কীভাবে মানুষের মন জয় করে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন না করে করোনা সংক্রমণ মুক্ত থাকা যায়। মনে রাখতে হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আচরণ ও অভ্যাসগত নেতিবাচক প্রবণতা পরিহার এবং প্রচলিত বেপরোয়া জীবনাচারের পরিবর্তন না হলে কাঙ্খিত মুক্তি সুদূর পরাহত এই বার্তাটি স্বেচ্ছাসেবকদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তবে লকডাউন কোথায় কিভাবে-কখন হবে এবং সংক্রমেণের হার প্রবণ এলাকা সু-নির্দ্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে শুধু সেখানে তা প্রয়োগ করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে।

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলাই পজেটিভ ক্যাম্পেইন পাওয়ার হিসেবে অবিহিত করে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাদেরও ছিল না। তাই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সে সম্পর্কে ধারানাও ছিল না। শুরুতেই কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ও সমন্বয়হীনতা ছিল। এসব নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে, তবে পরামর্শও থাকতে হবে। তাই কখন-কোথায়-কী ভুল হয়েছে, কেন হয়েছে সে কথা বার বার না লিখে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, কী করা যায় সেই পরামর্শ ও পথ বাতলে দিলে আমরা অবশ্যই গ্রহণ করবো।

আজ বুধবার দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আইইডিসিআর ও সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত রেডজোন ৪,৮,২০,২১ ও ২২ নং ওয়ার্ড এলাকার ২৫০জন স্বেচ্ছাসেবকদের কোভিড-১৯ কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং সংক্রান্ত ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, রেডজোন চিহ্নিত এলাকায় লকডাউন কার্যকর করণে প্রশিক্ষিত ও সুশৃংখল স্বেচ্ছাসেবকরাই অবদান রাখতে পারে। এ পরিস্থিতি প্রত্যেকের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নিজের সুরক্ষা নিজেরই হাতে। এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাকে অনেকেই আমলে আনছেন না। এই উদাসিনতাও একটি মারাত্মক ব্যাধি। তিনি একাজটি করতে গিয়ে স্ব্চ্ছোসেবকদের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদেরকে সংক্রমণ প্রবণ এলাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছে শারীরিকভাবে সরাসরি যেতে হবে না। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।

কর্মশালায় কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চু, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, কর্মশালার আইইডিসিআর এর প্রশিক্ষক ডা. মোহাম্মদ ওমর কাইয়ুম, ডা: তৌহিদুল আনোয়ার খান, ডা. তাহমিনা করীম, ডা, হায়দার, ডা.নাবিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সিটি মেয়রের নিকট করোনা সুরক্ষা সামগ্রী দিল
চট্টগ্রাম আইন কলেজের ২০১৮-১৯ এলএলবি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চসিকের পাশাশি বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস,ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এসব কার্যক্রমে অবদান রেখে চলেছেন। যা একটি আশাজাগানীয়া উদ্যোগ। এথেকে অন্যরাও উদ্ভুদ্ধ হয়ে সামাজিক ও মানবিক কাজে এগিয়ে আসছে। আজ বিকেলে চসিক নগরভবনের কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম আইন কলেজের ২০১৮-১৯ এলএলবি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণকালে মেয়র এসব কথা বলেন।

এসময় কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, আইন কলেজের ভিপি আবদুল খালেক সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সোহেল, আবদুর শুক্কুর চৌধুরী, সাবিহা সুলতানা রক্সি উপস্থিত ছিলেন।

সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দিল গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে চট্টগ্রাম নগরীতে কোভিড-১৯ সনাক্তদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এই সময় মেয়র বলেন, করোনাকালে যারা মানবিকতার মাহর্ত্ম নিয়ে সেবাব্রতে নিবেদিত তারা অবশ্যই সমাজ-বান্ধব ইতিবাচক দূত। তাদের সকল শুভ উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সহযাত্রী হবে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ, উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আবু তালেব বেলাল, এরশাদ খতিবী, মোহাম্মদ আহসান হাবীব চৌধুরী, এড.মোছাহেব উদ্দিন বখেতেয়ার উপস্থিত ছিলেন।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *