রোগীকে শ্বাসরুদ্ধ করতে নয়, শ্বাস নিতে সহযোগিতা করুন বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি আহ্বান সুজনের

রোগীকে শ্বাসরুদ্ধ করতে নয়, শ্বাস নিতে সহযোগিতা করতে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি আজ শনিবার (৪ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানান।

এ সময় জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। তাদের অপেশাদারসুলভ মনোভাবের কারণে করোনা আক্রান্ত রোগী ছাড়াও বিভিন্ন রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী অকালে মারা গিয়েছে। বছরের পর বছর তারা রোগীদের রোগের ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ বিত্ত বৈভবের মালিক হলেও রোগীদের প্রতি তাদের সামান্য পরিমাণ সহানুভূতি দেখা যায়নি করোনাকালীন সময়ে। অথচ মানবতার এক মহান ব্রত নিয়ে তারা এ পেশায় আসলেও রোগীদের জিন্মি করে নিজের পকেট ভারী করাই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। পরবর্তী মহামান্য হাইকোর্ট এবং নাগরিক সমাজের চাপে পড়ে তারা রোগী ভর্তি করালেও রোগীকে নূন্যতম চিকিৎসাসেবা না দিয়ে রোগীর আত্নীয় স্বজনদের ঘাড়ে বিশাল অংকের বিলের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে যে কোন চিকিৎসা ছাড়া শুধুমাত্র স্যালাইন লাগিয়ে দিয়েই রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা বিল আদায় করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সে বিলের মাত্রা লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রোগীর ব্যবহৃত ঔষধের দামও বাজার মূল্য থেকে কয়েকগুন বেশী আদায় করছে এসব অর্থলিপ্সু হাসপাতালগুলো। কোন নিয়ম নীতিরও তোয়াক্কা করছে না এ সব বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা।

ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার ঘোষণা দিলেও কার্যত চট্টগ্রামবাসীর সাথে প্রতারিত করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের সাথে বার বার আলোচনা এবং অনুরোধ করেও চট্টগ্রামের জনগনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও তাদের নিকট কলাপাতার মতো। কি কারণে তারা চট্টগ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত করবে তা সকলের মতো আমাদেরও বোধগম্য নয়।

এদিকে বন্দর এবং আমদানি রপ্তানি অঞ্চল হওয়ার ফলে চট্টগ্রামে দিনের পর দিন বাড়ছে করোনা রোগী। তারপরও বেসরকারি হাসপাতালে মিলছে না কোনো চিকিৎসাসেবা। নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শতাধিক আইসিইউ শয্যা থাকলেও সেগুলোয় ঠাঁই মিলছে না কোনো কোভিড কিংবা নন-কোভিড রোগীর। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী ভর্তি না করিয়েই হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দেখাচ্ছে এসব হাসপাতাল। আইসিইউতে কোনো রোগী না থাকলেও ভর্তি থাকার তথ্য দেখাচ্ছে প্রশাসনকে। গত ৩১ মে বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও তদারকি করতে সাত সদস্যের সার্ভেইল্যান্স কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।

উক্ত সার্ভেইল্যান্স কমিটিও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। তাই আমরা মনে করি সার্ভেইল্যান্স কমিটির তদারকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া ঐ কমিটিতে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের কোন প্রতিনিধি রয়েছে যারা সার্ভেইল্যান্স কমিটিকে ভূলপথে পরিচালিত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যারা জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দিনের পর দিন ছিনিমিনি খেলছে তাদের অভিযোগগুলো একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলসহ তাৎক্ষণিক জেল জরিমানা দিতে হবে। আমরা নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক চট্টগ্রামের সকল আইসিইউ এবং সিসিইউ বেডকে সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ের আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ঐ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের ভূয়া বুকিং বাণিজ্য বন্ধ হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

সুজন পূণরায় বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদেরকে তাদের গণবিরোধী কর্মকান্ড থেকে সরে আসার সবিনয় অনুরোধ জানান।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গতে বাধ্য করবেন না। যদি তা না হয় তাহলে নাগরিক উদ্যোগ জনগনকে সাথে নিয়ে অভিযুক্ত হাসপাতালের সামনে কঠোর অবস্থান কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।

তিনি রোগীর স্বজনদের আহবান জানান যদি কেউ মনে করে কোন হাসপাতাল অস্বাভাবিক বিল প্রদান করেছে সে ক্ষেত্রে ঐ হাসপাতালের বিল যেন পরিশোধ করা না হয়। অযৌক্তিক বিল পরিশোধ করতে গিয়ে কারো ভিটে বাড়ি বিক্রি কিংবা বন্ধক রাখতে হলে সেটা হবে মানবতার শ্রেষ্ঠ অপরাধ। আমরা আবারো বলতে চাই নাগরিক উদ্যোগ জনগনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাউকে আর বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবে না।

তিনি বিভিন্ন ছদ্মাবরণে এসব গণদুশমনদের আশ্রয় প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্যও সকলের নিকট আহবান জানান।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *