দীর্ঘ ১৩ বছর পর সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার।
সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা রমেশ চন্দ্র, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি সহ নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মমতাজুল হক প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
সম্মেলনকে ঘিরে সর্বত্র সরব আলোচনা চলছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। মাঠ সংলগ্ন রেলওয়ে জেলা পুলিশ ক্লাবসহ পুরো শহরকেই সাজানো হয়েছে নতুন সাজে।
এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশের মত সৈয়দপুরেও দলের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের নতুনদের আগমনের সুযোগ সৃষ্টিতে সারা পড়েছে। দল পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা নিবেদিত প্রাণ ও একনিষ্ঠ তাদের সমন্বয়ে ঢেলে সাজাতে প্রস্তুত কাউন্সিলররা। একদিকে তারা যেমন নতুনত্ব আনতে আগ্রহী, তেমনি নবীন-প্রবীনের যৌথ নেতৃত্বও প্রত্যাশা করছেন অনেকে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী খাঁটি আওয়ামীলীগার ও দেশপ্রেমিক নেতাকেই তাদের আগামী দিনের কর্নধার হিসেবে নির্বাচিত করতে চায় তারা।
এখন পর্যন্ত কাউন্সিলে প্রার্থীতা করার জন্য যারা প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের মধ্যে সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল। তিনি সর্বশেষ ২০০৫ সালে ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সাথে সভাপতি হয়েছিলেন আব্বাস আলী সরকার। তিনি ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী মারা যাওয়ার পর থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগকে এককভাবে পরিচালিত করে আসছেন আখতার হোসেন বাদল। তিনি ২০০৪ সালে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সাধারণ তৃণমূলের নেতা কর্মীরা এখন অনেক সচেতন। তারা যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন। তবে যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা টাকার জোরে নেতৃত্ব পেতে চায় তাদেরকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তা দলের জন্য কতটুকু ভালো হবে সে বিষয়ে সকলকে ভাবতে হবে। তবে যেই আসুক দলের প্রয়োজনে তারা যেন নিবেদিত প্রাণ হয় সেটাই আমার প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, আমার কোন প্যানেল নেই আমি এককভাবেই সভাপতি পদপ্রার্থী।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী ও মোখছেদুল মোমিন এর প্যানেল এর সভাপতি প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী।
তিনি বলেন, দলকে তৃণমূল থেকে সুসংগঠিত করতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকলকে অতীত ও ভবিষ্যৎ ভাবনায় রেখেই বর্তমান নেতৃত্ব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের নাম মুখে মুখে। তিনি রেলওয়ে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পূর্বে তিনি সে পদ ছেড়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথ তৈরী করেছেন। এ কারণে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তার প্রতি একটা ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি তৈরী হয়েছে বলে প্রচারণা রয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের সাথে। তিনি জানান, এটি দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের সম্মেলন। এখানে একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মাত্র। প্রতিপক্ষ বলে কিছু নেই। আমরা সবাই প্রতিযোগি এবং সবাই আওয়ামী পরিবারের সদস্য। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ থাকবেন। তারা যেভাবে পরামর্শক্রমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে কাউন্সিলরদের সুযোগ দেবেন সেভাবেই হবে। আশা করি নেতা-কর্মীরা সার্বিক দিক বিশ্লেষন করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তিনি বলেন, যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে তাতে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে যদি কেউ কোন অপ্রীতিকর কথা প্রচার করে তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। যাদের কর্মকান্ডই নেতিবাচক বা যাদের ইতোপূর্বে গন্ডগোল করার রেকর্ড আছে তারাই সম্মেলনকে ঘিরে ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। সকলের সহযোগিতায় সম্মেলন সফল করার মাধ্যমে আগামীর নেতৃত্ব যেন দলের সার্বিক কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারে সে প্রত্যাশাই করছি।
এর পাশাপাশি সাবেক এমপি মরহুম আলীম উদ্দিন ও বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা এমপি রাবেয়া আলীম এর ছেলে পেট্রো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মোঃ রাশেদুজ্জামানের নাম শোনা যাচ্ছে প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু তিনি সভাপতি না সম্পাদক পদের প্রার্থী তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। এ ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দেখেন কি হয়।
এদিকে একটি সূত্র মতে, রাশেদুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী না হলে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জিকো আহমেদ প্রার্থী হবেন। পাশাপাশি সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র হিটলার চৌধুরী ভলুও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।
সম্মেলনে উপজেলার ২৫৪ জন কাউন্সিলর তাদের মতামত দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন। এর মধ্যে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৮৬ জন, উপজেলা কমিটির ৫২ জন এবং অন্যান্য ১৫ জন। তবে গত ২০ অক্টোবর উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান আলী মারা যাওয়ায় মোট ২৫৩ জন কাউন্সিলর রয়েছে।
Leave a Reply