চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, করোনা ভাইরাসের বাহন এখন বাতাস। এই বাতাসের উপর ভর করে চীনের উহান প্রদেশ থেকে ঢাকায় আসতে করোনা সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মাস। বাংলাদেশে যেদিন প্রথম রোগী সনাক্ত হলো সেদিন ছিল এটা বড় সংবাদ।
এখন এই করোনা প্রতিদিনের বড় সংবাদ। এই করোনাকালে অন্য দূর্যোগগুলোও বসে নেই। এরই মধ্যে রুটিন মাফিক হানা দিয়েছে ঘুর্ণিঝড় আম্ফান। তারও আগে সিডর ও আইলা ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল সহ জনপদ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের অভিজ্ঞতা থাকলেও করোনা মহামারি সম্পর্কে বাংলাদেশতো বটেই সারা বিশ্বেরও কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই তার লাগামহীন দৌরাত্মে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এতকিছুর পরও এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধক স্থায়ী প্রতিশেষধক আবিস্কার হয়নি। তাই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না কবে ও কখন করোনা আগ্রাসন থেকে মানব জাতি মুক্তি পাবে। তবে আমরা ভয়কে জয় করতে জানি। বিজয়ী ও লড়াকু জাতি হিসেবে বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি আছে।
তিনি আজ সকালে স্থানীয় সরকার পরিচালিত ইউএনডিপি ও ইউকে- এইডের সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রান্তিক জনগোষ্টির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ডের দরিদ্র জনগোষ্টির গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য ১ হাজার দিনের জরুরী পুষ্টি খাদ্য সহায়তা প্রদানকালে একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধ্বস ও স্থবিরতার কারণে শ্রেণীগত অবস্থানের ক্রম অবনমন ঘটছে। বাংলাদেশে দারিদ্রসীমা নিম্নমুখি হতে হতে করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ৭ ভাগের কাছাকাছি নেমে এলেও এখন বিরূপ পরিস্থিতিতে বেকারত্ব ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় দারিদ্র বৃদ্ধির মাত্রা ৩০ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও বিদেশেও অনেক প্রবাসী কর্মহীন অবস্থায় কালাতিপাত করছেন। তারা দেশে ফেরার পর দারিদ্রের ক্রম অবনমন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে নামবে তা ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠতে হয়। এমন একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াইয়ের মাঠে আছেন। তিনি বিধ্বস্থ অর্থনীতি পূনরুদ্ধারে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীসহ সকল অর্থনৈতিকখাতে প্রণোদনা বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। লকডাউনের মধ্যেও জীবন-জীবিকার সমন্বয়ে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার জন্য সময়োপযোগি পদক্ষেপ নিয়েছেন। আজ গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই দু:সংবাদ জানান দেয়া হলেও অনেক ইতিবাচক আশাবাদও আছে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রিয় তহবিল ভান্ডারে ৩৬ বিলিয়ন ডলার মওজুদ আছে। জুন মাসে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের হার ছিল সর্বোচ্চ। সবচেয়ে শুভ সংবাদ হলো আউশ ধানসহ মৌসুমী ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক ক্রয় ক্ষমতা কিছুটা কমতির দিকে হলেও কারও না খেয়ে মৃত্যুর কোন দু:সংবাদ নেই।
তিনি করোনা মোকাবেলায় জনসচেতনতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার মত একটি মারাত্মক আগ্রাসনকে প্রতিহতের জন্য জনসচেতনতাকে প্রাথমিক প্রতিরোধ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আগে জানতাম ছোঁয়াছে সংক্রমনের কথা। কিন্তু করোনা কখনো সহজেই ঘরে ঢুকে না এবং সে ভিশন অভিমানী, তাকে দাওয়াত দিয়ে ঘরে ডেকে আনতে হয়। সে-তো বাতাসেই ভর কর আছে। আমরা যদি দাওয়াত দিয়ে তাকে ঘরে ডেকে না আনি তাহলে সে-তো জোর করে ঘরে ঢুকতে পারে না। তাই করোনা নিয়ে ভয়ের কোন দরকার নেই। প্রয়োজন শুধু নিজের সচেতনতা ও সুরক্ষা।
এসময় কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানুর বেগম, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাউন ম্যানেজার মোহাম্মদ সরোয়ার খান, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ হানিফ, টাউন ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন কোহিনুর আকতার, মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন, হারুনুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply