নিয়মের বাইরে গিয়ে গাড়ির সাইজ বা ট্র্যাকের সাইজ যারা বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ নির্দেশ দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পথচারী ও যারা গাড়িতে চড়েন তাদেরও দায়িত্ব আছে, যারা চালান তাদেরও দায়িত্ব আছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক দায়ী নয় উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। উপজেলা পর্যায়েও চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তা যখন তৈরী করা হয়, সেখানে কত ফিট রাস্তায় কত সাইজের গাড়ি চলবে, দুটো গাড়ি চলতে গেলে কি সাইজের গাড়ি চলতে পারে এগুলো কিন্তু সাইন্টিফিক্যালি হিসেব করে তৈরী করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা দেখি যখন একটা বাস তৈরী করা হয় তাতে আরও ৪টা সিট বাড়ানোর জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাড়ানো হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যখন একটা ট্রাক তৈরী করা হয় তখন লোহার ক্ল্যাম্ব দিয়ে দু’পাশ বাড়িয়ে দেয়া হয়, যাতে বেশি মাল নিতে পারে। তাতে রাস্তার যতটুকু দখল করার কথা তার থেকে বেশি দখল করে নেয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়গুলো আমি সব সময় সড়ক পরিবহন মন্ত্রালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জানিয়েছি। যেহেতু এখানে মন্ত্রী সচিব আছে সবাইকে বলছি, আবার কেউ যদি এ ধরনের নিয়মের বাইরে গাড়ির সাইজ বা ট্র্যাকের সাইজ বাড়ায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় চালকদের প্রশিক্ষণের দিকেও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, সাবেক নৌ মন্ত্রী শাজাহান খানসহ সড়ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা এ সময় উপস্থিতি ছিলেন।
এ সময় নিরাপদ সড়কের জন্য ‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্যাটিজিক অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৭’ বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এছাড়া এ সময় তিনি সরকারের অন্যান্য পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু চালক ও রাস্তার দোষ দিলে হবে না এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফুটওভার ব্রিজ আছে, তরুণরা তা ব্যবহার না করে রাস্তা পার হয়। তার যদি দুর্ঘটনা হয়, সেটার জন্য আমি চালককে দায়ী করবো কিভাবে। গাড়িতে বসে বাসের বাইরে হাত ঝুলিয়ে রাখা যাত্রীদের নিয়ম না। কাজেই দয়া করে কেউ বাসের জানালা দিয়ে হাত ঝুলিয়ে রাখবেন না। এমন করলে দুর্ঘটনা হবেই। তার জন্য অন্যকে দায়ী করলে কোন লাভ হবে না।
তিনি বলেন, চালকরা বেশি সময় গাড়ি চালানোর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া আমার মনে হয় একান্তভাবে দরকার। চালকদের ‘ওভার টেকিং’য়ের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার কারণেও দুর্ঘটনা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার চালকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার তৈরীর ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ৪টি জায়গায় নির্দ্দিষ্ট করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশেই ‘বিশ্রামাগার’ করে দেন। যারা গাড়ি চালক তারা যেন বিশ্রাম নিতে পারে সেই সুযোগ থাকবে। সেখানে চালকদের জন্য সুবিধা থাকবে। সেখানে গাড়ির তেল নিতে পারবে, যাত্রীরা নামতে পারবে এবং টয়লেটেরও ব্যবস্থা থাকবে।
এ সময় চালকদের প্রশিক্ষণের দিকে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন যারা চালক আসবে তাদের জন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে আমি দেখেছি, যেখানে স্কুল ও বেশি সংখ্যায় মানুষ রাস্তা পারাপার হয়, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠান বা স্কুলের একজন শিক্ষক কিংবা প্রতিনিধি যে কেউ থাকে, সঙ্গে ট্র্যাফিক পুলিশের থাকে। তারা রাস্তা পারাপারে সাহায্য করে। এভাবে ছেলে মেয়েদের পার করে দেয়। ঠিক এভাবে কারখানাসহ যেখানে অধিক সংখ্যাক লোক চলাচল করে তাদের পারাপারের ব্যবস্থাও করে দিতে হবে।
Leave a Reply