লক্ষ্মীপুরে বেড়ে গেছে সংক্রমণের ঝুঁকি: কমে গেছে করোনা পরীক্ষা

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরে করোনাভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করায় পরীক্ষা অনেক কমে গেছে।করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেকে টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। গত ১০ দিনে জেলায় (১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত) ৬৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অথচ এর আগের ১০ দিনে (২০ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত) নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৩৭৯টি। অর্থাৎ মূল্য নির্ধারণ করায় পরীক্ষার হার অর্ধেক কমে গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তিন বিশেষজ্ঞ জানান, দরিদ্র মানুষ টাকা দিয়ে পরীক্ষা কম করাচ্ছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। পরীক্ষা না করিয়ে, চিকিৎসা না নিয়ে তাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। তাঁরা বলেন, অনেক মানুষের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে। অনেকের জীবিকা হুমকির মুখে। দেশের বহু মানুষ কর্মহীন। জীবন-জীবিকা কঠিন হয়ে যাওয়ায় বড় শহর থেকে মানুষ গ্রামে ফেরত এসেছেন। সেসব মানুষের পক্ষে এখন টাকা খরচ করে করোনা পরীক্ষা করানো অনেক কঠিন।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগ ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইউজার ফি’ বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, বুথে ও হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হবে। আর বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা দিতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফি ৩ হাজার ৫০০ ও ৪ হাজার ৫০০ টাকা। ১ জুলাই থেকে পরিপত্র কার্যকর হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) লক্ষ্মীপুর কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে ২০০ বা ৫০০ টাকা নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র মানুষের কাছে অনেক বেশি টাকা। করোনার উপসর্গ থাকলেও অনেকে এই টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাবেন না। পরীক্ষা না করিয়ে, চিকিৎসা না নিয়ে তাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবেন। এতে মহাবিপদ ঘটতে পারে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৫ টি উপজেলা থেকে ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ৯ জুলাই ৪৯টি, ৮ জুলাই ৮৪, ৭ জুলাই ৬২, ৬ জুলাই ১১৩, ৫ জুলাই ৫৫টিসহ গত ১০ দিনে ৬৯৫ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে এসব নমুনা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ফি নির্ধারণের আগে গত ২১ জুন ১১০টি, ২২ জুন ১৯৬, ২৩ জুন ১১৬, ২৪ জুন ৯০, ২৫ জুন ১২০টিসহ ৩০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৯ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

চরআবাবিল গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি কৃষক। তিন দিন ধরে জ্বরে ও কাশিতে ভুগছেন। বৃহস্পতিবার রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০ টাকা না থাকায় নমুনা না দিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও সিভিল সার্জন মো. আবদুল গাফফার মোবাইল ফোনে জানান, আগে করোনা পরীক্ষা বিনা মূল্যে ছিল। এ কারণে উপসর্গ না থাকলেও অনেক মানুষ পরীক্ষার সুযোগ নিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় এটি রোধ হয়েছে। আর প্রথম অবস্থায় সাময়িক কিছু সমস্যা হয়তো দেখা দেবে। কিছুদিন পরেই এসব ঠিক হয়ে যাবে।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *