বিদেশগামীদের কোভিট নমুনা পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা রোধ ও উচ্চ হারে ফি আদায় প্রত্যাহরের দাবি ক্যাব’র

আকাশপথে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সরকারের নির্ধারিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করায় বিপুল পরিমান বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

সরকারি ল্যাবগুলি ইতিপূর্বে সাধারণ রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় চরম অব্যবস্থাপনায় কাংখিত সেবা ও মান নিশ্চিত করতে পারে নি। তারপরও বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব পাবার কারনে শুধু বিদেশগামী যাত্রীরা হয়রানির শিকার নয়; সাধারণ কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হচ্ছে। এতে বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

অন্যদিকে আকাশপথে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালে সাড়ে তিন হাজার টাকা ও বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হলে সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে হবে। এই উচ্চ হারে নমুনা ফি নির্ধারণ করার কারনে সরকারি হাসপাতাল থেকে নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হলেও তাদের গুনতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ধার্য করা ফির সমান টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের দুই রকম ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহনযোগ্য এবং মহামারিকালে এমন দ্বৈতনীতি জনমনে ক্ষোভ বাড়াতে পারে।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার নমুনা পরীক্ষায় ফি ধার্য করায় নমুনা পরীক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লক্ষণ-উপসর্গ থাকার পরও অসচ্ছল ও দরিদ্র মানুষ নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের দুই রকম ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহনযোগ্য এবং মহামারিকালে এমন দ্বৈতনীতি জনমনে ক্ষোভ বাড়তে পারে। বিদেশগামী যাত্রিদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধা। বছরের পর বছর ধরে বিদেশে কাজ করে টাকা পাঠিয়ে তারা দেশের রির্জাভ ও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। কাজে ফিরতে ওইসব দেশে যেতে এখন তাদের করোনা নেগেটিভ সনদের জন্য তাদের কাছ থেকে উচ্চহারে ফি আদায় অনাকাংখিত ও অমানবিক। তাছাড়া রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য দ্বৈতনীতি গ্রহণ করতে পারে না।

এমতাবস্থায় বিদেশগামীদের কোভিট নমুনা নেগেটিভ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা রোধ ও উচ্চ হারে ফি আদায় প্রত্যাহরের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এনএম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস উপরোক্ত দাবি জানান।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন প্রবাসী, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা কিংবা পর্যটন যেকোনো কাজেই বিদেশ যেতে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এই সনদ সংগ্রহ করতে হবে। কোভিট নেগেটিভ সনদ নিতে হবে দেশের সুনির্দিষ্ট ১৬টি ল্যাব থেকে। নমুনা দেয়ার আগে সিভিল সার্জন অফিসেই টিকেট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য শুধুমাত্র একটি ল্যাব পরীক্ষা, একটি বুথে নমুনা সংগ্রহ এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি পয়েন্টে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম করায় শত শত মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠার আশংকা তাই এই সংখ্যা বৃদ্দি করা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন একই ল্যাবে বিদেশগামী ও সাধারণ কোভিড রোগীদের নমুনা আর পরীক্ষার ব্যবস্থা করায় সাধারণ মানুষের কোভিড পরীক্ষায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর পরীক্ষার পল পেতে যেখানে ১০-১৫ দিন সময় লেগেছে সেখানে বিদেশগামীদের এই নেগেটিভ সনদ পেতে বিলম্ব হলে তাদের জন্য আরও কঠিন সমস্যা হতে পারে। তাই এই সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার এবং তাৎক্ষনিক বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশগামীদের পরীক্ষার সনদ সরবরাহ করা প্রয়োজন।

২৪ ঘণ্টা/এম আর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *