ইউপি সদস্যের হুকুম : কাবিন ছাড়াই ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীর বিয়ে পড়ালেন মসজিদের ইমাম

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইসহাক হুকুম দিয়েছেন। তাই বিয়ের নিকাহ রেজিস্ট্রার এন্ড কাজী কিংবা মুহুরীর প্রয়োজনবোধ করেননি। কাবিননামা রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া নিয়মিত এক ছাত্রীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসালেন মসজিদের এক ইমাম।

অবিশ্বাস্য হলেও ২০ জুলাই (সোমবার) বিকেলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের সোনাইবর পাড়া জামে মসজিদে এ ঘটনাটি ঘটে।

আর স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইছহাকের হুকুমে এ বাল্য বিয়েটি পড়ান পার্শ্ববর্তী গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা খালেক হোসেন।

মেয়েটির নাম তাসফিয়া আক্তার। সে উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভেল্লাবর বাড়ীর প্রবাসী মোহাম্মাদ আলীর মেয়ে এবং গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্রী।

বিয়ে পড়ানো ইমাম মাওলানা খালেক হোসেন জানান, পুটিবিলা ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মাদ ইসহাকের হুকুমেই মেয়েটির বিয়ের আকদ পড়িয়েছি।

তিনি আরো জানান, ইসহাক মেম্বার আমাকে বলেছেন কোন সমস্যা হবেনা। অনলাইনে নতুন জন্মনিবন্ধনে মেয়ের বয়স ১৮ বছর ৭ মাস করে এনেছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইসহাক বলেন, মাদরাসায় জমা দেয়া মেয়েটির জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৫/১৬ বছর হবে। তবে, মেয়েটি স্ব-শরীরে বেড়ে যাওয়ায় বিয়ের জন্য ১৮ বছর ৭ মাস করে নতুন জন্মনিবন্ধন অনলাইন করে দিয়েছি।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ারবর বাড়ীর আবুল হোসেনের ছেলে মো: মিজানের সাথে একই ওয়ার্ডের ভেল্লাবর বাড়ীর প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর মেয়ে স্থানীয় মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া নিয়মিত ছাত্রী তাসফিয়া আক্তারের বিয়ের কথা-বার্তা চূড়ান্ত হয়।

এরই সূত্র ধরে গত ২০ জুলাই (সোমবার) আছর নামাজের পর স্থানীয় সোনাইবর পাড়া জামে মসজিদে বিয়ের আকদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইতিমধ্যে মেয়ের বয়স কম হওয়া এবং বাল্যবিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে পুটিবিলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার এন্ড কাজী আবদুস সোবাহান এই বাল্যবিয়েটি রেজিস্ট্রেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করে আকদ অনুষ্টান বয়কট করেন।

এসময় জরুরী কাজ থাকার অজুহাত দেখিয়ে ওই মসজিদের দীর্ঘদিনের ইমাম মাওলানা নুরুল আলমও আকদ অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান। পরে পার্শ্ববর্তী গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়া জামে মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মাদ ইসহাকের হুকুমে এবং উপস্থিতিতে নিকাহ রেজিস্ট্রার কিংবা কাবিননামা ছাড়াই এ বাল্যবিয়ের আকদের আয়োজন সম্পন্ন হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো : মাহমুদুর রশিদ বলেন, ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী তাসফিয়া আক্তার পড়া-লেখায় মোটামুটি ভালো ছিল। সে নিয়মিত মাদরাসায় ক্লাস করতো । এতো অল্প বয়সে তার বিয়ের খবর শুনে আমি খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় পুটিবিলা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার এন্ড কাজী আবদুস সোবাহান বলেন, আমার মহুরীর মাধ্যমে ছাত্রীটির বিয়ের বিষয়ে জানতে পেরে আমি ছাত্রীর পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারা আমার কাছে স্বীকার করেছেন মেয়েটি স্থানীয় গৌড়স্থান আখতারুল উলুম দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। এছাড়াও আমি জানতে পেরেছি মেয়েটি বয়সে ছোট। তাই আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মেয়েটির বাল্য বিয়ের আকদ অনুষ্ঠান বয়কট করি এবং রেজিষ্ট্রশন করতে অপারগতা প্রকাশ করি। পরে জানতে পারলাম পার্শ্ববর্তী স্থানীয় মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে কাবিননামা ছাড়াই মেয়েটির আকদ পড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: তৌছিফ আহমেদ বলেন, বাল্যবিবাহ একটি বড় অপরাধ। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

২৪ ঘণ্টা/এম আর/আজাদ

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *