চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড আয়োজিত মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ এ হামলা চালানো হয়।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘মৌলবি সৈয়দকে মুক্তিযোদ্ধা বলে অস্বীকার করা এবং বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি’ বাঁশখালীর এমপির এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে কয়েকটি গাড়ি ভর্তি লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা সকলেই বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারী। এতে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আহতদের মধ্যে অন্যরা হলেন- বাঁশখালী কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, সাতকানিয়া কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ভেদু, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল আবেদীন, জহির উদ্দিন মো. বাবর, ইমরানুল ইসলাম তুহিন।কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, ছাত্রলীগ নেতা আরমান হোসেন, জয় সরকারসহ আরও অনেকে। হামলায় গুরুতর আহত মৌলভী সৈয়দ আহমদের ভাতিজা, দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
হামলার বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী, চট্টগ্রাম গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার এবং চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড়ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফ আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেয়া ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলছিল। মানববন্ধন শুরুর ১০ থেকে ১২ মিনিটের মাথায় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের এপিএস ও তার অনুসারী বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হকের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদেরও বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে আমিসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছি।’
এদিকে হামলার ঘটনার পর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে নগরের জামালখানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে কমান্ডার সাহাব উদ্দিন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সকল পদ ও সংসদ সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ও বাঁশখালী থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির শ্রম সম্পাদক ডা. আলী আশরাফ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ২৭ জুলাই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
ওইদিন রাত ১০টার দিকে গণমাধ্যমে ডা. আলী আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা নন, থানা আওয়ামী লীগের কমিটির কেউ নন এবং বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি উল্লেখ করে মন্তব্য করেন স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। যার কল রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এমন মন্তব্যের পর বাঁশখালীজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এসব বিষয় নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের সমালোচনা করায় মৌলভী সৈয়দের ভাইপো ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেন সাংসদ নিজে। এরপর সাংসদের অনুসারী মোরশেদুর রহমান নাদিম বাদী হয়ে ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩ আগস্ট বাঁশখালী উপজেলার প্রেমবাজার চত্বরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ চলাকালে সাংসদ মোস্তাফিজুরের অনুসারী স্থানীয় ১১ নম্বর পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজল কবিরের নেতৃত্বে হামলা হয়।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
Leave a Reply