ইসলাম মাহমুদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে স্থানীয়দের সাথে মিশে যাওয়া বেশির ভাগ রোহিঙ্গা এখন সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা উল্টো নানাভাবে নিয়ন্ত্রন করছে স্থানীয়দের। আগে আসা রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে মাদক ব্যবসা এবং বিভিন্ন জঙ্গি এবং নিষিদ্ধ সংগঠন এবং বিদেশীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেছে বিপুল টাকা মালিক।
ফলে এসব রোহিঙ্গারাই নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে বেশির ভাগ এলাকা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তাই দ্রুত আগে আসা রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে সম্প্রতি যারা স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছে তাদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার এক ইউনিয়নেই স্থানীয়দের অন্তত ২০০ এর বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের বিয়ে হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী ৮ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ আহামদের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম বিয়ে করেছেন ২৪ নং ক্যাম্পের হাসিনা নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে।
এছাড়া হ্নীলা ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পানখালী এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান বিয়ে করেছেন জামতলী ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নারীকে। একই এলাকার স্থানীয় নারী মোঃ হোসন ফকিরের মেয়ে তাসমিনা বিয়ে করেছেন রোহিঙ্গা যুবককে। বর্তমানে সে সৌদি প্রবাসী বলে জানা গেছে।
হ্নীলা ৭ নং ওয়ার্ডের দুদুমিয়ার ছেলে মোঃ রাসেল বিয়ে করেছেন হ্নীলা ২৫ নং ক্যাম্পের পাইক মনি নামের এক রোহিঙ্গা মেয়েকে। এছাড়া ৪ নং ওয়ার্ডের নুর মোহাম্মদের ছেলে রফিকও রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করেছেন। একই ওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালীর সোলতান আহামদের ছেলে লুৎফুর রহমান, দিল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ রাসেল, ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সিকদার পাড়ার হাজী কালা মিয়ার পুত্র কামাল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালীর আবুল কালামের ছেলে আলমগীর, এছাড়া স্থানীয় আমির হোসেন সরওয়ার সহ অনেকের আশ্রয়ে রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা।
শুধু নতুন আসা নয় আগে আসা রোহিঙ্গা রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকায়। শহরের পাহাড়তলী এলাকায় আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্যতম সাইফুল খলিফা (হালিমাপাড়া), কামাল ফকিরের ছেলে আবদুল্লাহ এবং তার পুরো পরিবার, রহমত উল্লাহ (টমটম চালক) তার এক ছেলে বর্তমানে চট্টগ্রামের বি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্ত্রী মহেশখালী থেকে (ভোটার হয়েছে), আবদুল মালেক (হালিমাপাড়া), এনায়েত উল্লাহ, (হালিমাপাড়া), ফয়েজ উল্লাহ (রোহিঙ্গা হয়েও ভোটার আইডি করায় জেল খেটেছে), মৌলবী নুরুল হোসাইন, মৌলবী আহমদ কবির (এনজিও কর্মকর্তা), আবুল হোসেন পেটান, তার ভাই হাসান, নুর বাহার স্বামী আসাদ উল্লাহ (মালয়েশিয়া প্রবাসী) সত্তরঘোনা, জাহেদ হোসেন (নতুন বাজার,পাহাড়তলী), শওকত মিস্ত্রি, সত্তরঘোনা, হাফেজ আহামদ (জেল ফেরত) সত্তরঘোনা। এছাড়া রোহিঙ্গা হয়েও পরিচয় গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং এনজিও কর্মকর্তা আজিজ, বাহাদুর মিয়া, হালিমাপাড়া।
অভিযোগ রয়েছে, এসব রোহিঙ্গা আবার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে ভুয়া সনদ এবং ভিন্ন জেলা থেকে কাগজ পত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রামে পড়ার সুযোগ করে দেয় আবার তাদের মুল পৃষ্টপোষক হচ্ছে রোহিঙ্গা ইব্রাহিম। যে রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে পড়েছে। এছাড়া মৌলবী ফারুক, মৌলবী নুর মোহাম্মদ, অজি উল্লাহ, ছৈয়দ আমিন, হাসিম উল্লাহ রোহিঙ্গা হয়েও পাহাড়তলী এলাকায় দাপটের সাথে বিচরণ করে এবং নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
এছাড়া বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকার পরিচিত রোহিঙ্গা জহির হাজী, বশির মাঝি (বর্তমানে কয়েকটি দোকানের মালিক), পাহাড়তলী ইসুলুঘোনার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে আরিফ উল্লাহ, ইয়াবা ব্যবসায়ি হিসেবে পরিচিত নুর মোহাম্মদ, হাফেজ আহামদের স্ত্রী সনজিদা (বর্তমানে গোলদিঘির পাড় এলাকা থেকে ভোটার হয়েছে), আবদুল মতলব প্রকাশ আমির সাব (বায়তুশ শরফ হোস্টেলের বাবুর্চী, সিরাজুল হক মাঝি (ইসুলুঘোনা), তার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ি হিসেবে পরিচিত মনজুর আলম, মোহাম্মদ আরিফ (বেশ কয়েকটি ইয়াবা মামলার আসামী), আবদুল হাকিম মাঝির ছেলে মোঃ শফি, বশির প্রকাশ শুটকী বশির, রোহিঙ্গা বর্তমানে সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলাম, পিতা ইয়াকুব আলী, মাতা মাহমুদা খাতুন।
সে ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসাবে পাসপোর্ট করেছে যার পাসপোর্ট নাম্বার বি কিউ ০০৭১৮৪৬১। বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী পাহাড়তলী সত্তরঘোনার বাসিন্দা জমির হোসাইন পিতা আলী হোসাইন মাতা মোস্তফা খাতুন স্ত্রী ছমুদা খাতুন, যার পাসপোর্ট নাম্বার এ ই ০১৮৯৪০২। একই এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা হলেও পাসপোর্ট পেয়েছে মোহাম্মদ ইউছুপ, পিতা আবদু শুক্কুর মাতা জামরুপ বেগম, স্ত্রী রাজিয়া বেগম পাসপোর্ট নাম্বার এ ই্ ৬১৮৮২৬৩।
এদিকে শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার গোদারপাড়া এলাকার স্বীকৃত রোহিঙ্গা গোলাম হেসেনের ছেলে আসাদ উল্লাহ সহ কয়েক ভাই রয়েছে। যাদের অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র করতে না পারায় দীর্ঘদিন বিপুল টাকা নিয়ে ঘুরেছিল। বর্তমানে মায়ামনার থেকে আসার তাদের পুরাতন আত্মীয়-স্বজন প্রায় সময় তাদের বাড়িতে আসে বলে জানান এলাকাবাসী। এছাড়া তাদের ছেলেমেয়েরা অনেকে বর্তমানে এনজিওতে চাকরী করে।
পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা এলাকার সিরাজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, আমিন, নজির আহামদের পুরো পরিবার, হাফেজ মনির, ছৈয়দুল আমিন, শফিক মিস্ত্রি, নেছারু সহ অসংখ্য রোহিঙ্গা এসে এখানে বসাবাস করছে। এখন নানাভাবে সমাজের নেতাও বনেছে অনেকে।
বৈদ্যঘোনা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন অনেকে এসেছে তবে আগে এসে বর্তমানে স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রোহিঙ্গার মধ্যে অন্যতম আশরাফ আলী খলিফা, নুর মোহাম্মদ মিস্ত্রি, জাহেদের বাবা হুন্ডি ব্যবসায়ি মালয়েশিয়ার দালাল ছিল, শফি, খাজা মঞ্জিল। এরা বেশ কয়েক ভাই আছে। যারা প্রত্যেকে এখন স্থানীয় হিসাবে দাবড়ে বেড়ায়। জকরিয়া সওদাগর, নজির আহামদ শ্রমিক। খুরুশকুল হামজার ডেইল এলাকা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে আসা রোহিঙ্গা যারা এখন স্থানীয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে মোঃ কালু, ইউচুপ, আবদুল।
২৪ঘণ্টা/এন এম রানা
Leave a Reply