পরকীয়ার অজুহাতে স্ত্রীকে হত্যার পর ৯৯৯ এ ফোন করে থানা হাজতে ঘাতক স্বামী!

পরকীয়ার অভিযোগে স্ত্রী হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক দম্পতির বিবাহিত জীবনের নয় বছর পর স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী। শুধু তাই নয়, হত্যার পর ৯৯৯ এ ফোন করে দম্ভ সহকারে পুলিশকে খুনের বর্ণনা দেন তিনি।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তার আব্দুল মাবুদের বাড়িতে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। খুন হয় ৩০ বছর বয়সী শারমিন সুলতানা রিনি। ঘাতক স্বামী আবদুর রহিম ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা ৬নং ওয়ার্ড সিকদার পাড়ার রমজু মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আব্দুর রহিম ও শারমিনের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। খুন হওয়ার মাত্র তিন মাস আগেই মেয়েটির জন্ম দেন স্ত্রী নুসরাত। বৃহস্পতিবার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে রিনিকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে আবদুর রহিম।

স্ত্রীকে খুন করার পর তার ছেলে ও মেয়েকে দুই দফায় ঘরের পাশে বোনের ভাড়া বাসায় রেখে আসে। পরে নিজেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে স্ত্রী হত্যার বিষয়ে জানায়।

ফোন পেয়ে পুলিশ ঘরের ভিতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আহত শারমিনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারমিন মারা যায়। এদিকে স্ত্রী হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ ঘাতক স্বামী আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করে।

নিহতের চাচাত ভাই ফরিদুল আলম বলেন, আবদুর রহিম একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি বিগত ৪ বছর ধরে রোয়াংছড়ি এলাকা থাকতেন। তিনি ওখানে টিউশনি করতেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের সময় তিনি বাড়ি চলে আসেন।ফরিদুল আলম আরও জানান, আবদুর রহিম বাড়িতে ঠিকমত থাকতেন না। বিভিন্ন সময় তিনি গরুর গোয়াল ঘরেও ঘুমাতেন।

জানা যায়, ৯ বছর আগে সাতকানিয়ার গোয়াজার পাড়া এলাকা থেকে ভালবেসে বিয়ে করে শারমিনকে। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে স্বামী আবদুর রহিম সব সময় তার স্ত্রী শারমিনকে পরকীয়ার অজুহাত এনে ঘরের ভিতরে রেখে বাইরে তালা লাগিয়ে রাখতেন।

স্ত্রীকে কোথাও বের হতে দিতেন না। এনিয়ে দুজনের মধ্যে পারিবারিক বিবাদ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে শারমিনকে খুন করে আবদুর রহিম।

এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বামী আব্দুর রহিম তার স্ত্রীকে দা’ দিয়ে মাথা, গলা, ও কপালে কুপিয়ে জখম করে নিজেই ৯৯৯ কল করে আত্মসমর্পণ করেছে।

ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের একটি টিম গিয়ে রক্তার্ত অবস্থায় স্ত্রী শারমিনকে প্রথমে সাতকানিয়ার আশ শেফা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে স্ত্রী হত্যার সকল দায় স্বীকার করে নেওয়ায় আব্দুর রহিমকে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষে মামলা দায়েরের পর তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে জানালেন ওসি।

২৪ ঘণ্টা/রাজীব

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *